খেলাধুলা

চুপি চুপি টাইগারদের প্র্যাকটিস দেখছিলেন আফগানিস্তানের কোচ, অতপর..

আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর স্টেডিয়ামের অপূর্ব স্থাপত্য ও নির্মাণ শৈলি রোজবোল স্টেডিয়ামকে করেছে মোহনীয়। এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ ও মোহিত না হয়ে উপায় নেই। যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে। গেছেও। সবাই একবাক্যে বলছেন, দারুন সুন্দর স্টেডিয়াম। পাশাপাশি প্রেস বক্সটিও যেন স্বপ্নপূরী। ঠিক উইকেটের পিছনে মাঠের উত্তরে। সবচেয়ে বড় কথা প্রেস বক্সটা একদম পাঁচ তারকা হোটেল ‘হিলটনের’ ভিতরে। অন্য সব স্টেডিয়ামে যেমন মিডিয়া এন্ট্রি থাকে এবং স্টেডিয়ামে ঢুকতেই ‘মিডিয়া’ লেখা নিদের্শনা দেয়া থাকে। এখানে তা নেই।

Advertisement

শোনা যায়, কথায় বলে ‘চাঁদেরও নাকি কলঙ্ক আছে।’ রোজ বোল স্টেডিয়ামের এই একটিই মাইনাস পয়েন্ট যে প্রেস বক্স খুঁজে পাওয়াই দায়। কোথাও কিছু লিখা নেই। এমনকি পুরো স্টেডিয়াম একবার-দুবার ঘুরেও বোঝার উপায় নেই, এটাই মিডিয়ার প্রবেশ পথ।

কিন্তু প্রেস বক্সের ভিতরটা সেই রকম। সত্যিই যেন স্বপ্নপূরি। একদম ফাইভ স্টার হোটেলের ভিতরে। প্রেস বক্স ও তার আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা যেন পাঁচ তারকা হোটেল।

এমন স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশের অনুশীলন যখন প্রায় ৭০ ভাগ হয়ে গেছে, তখন হঠাৎ করেই প্রেস বক্সে এসে ঢুকলেন এক দীর্ঘদেহী ক্যারিবিয়ান; ফিল সিমন্স। বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগিদের কাছে খুব পরিচিত নাম। বহুবার বিভিন্ন দেশের কোচ হয়ে বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবনে খেলতেও গিয়েছিলেন; কিন্তু আজ সিমন্স প্রেস বক্সে এসেছিলেন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে।

Advertisement

তিনি এখন আফগানিস্তানের কোচ। মাশরাফি, সাকিব, তামিমদের সবাইকে চেনেন জানেন। বহুবার প্রতিপক্ষ হিসেবে কাছ থেকে মাঠের পাশে ডাগ আউটে বসে তাদের খেলা দেখেছেন।

২৪ ঘন্টা পর যেহেতু এই মাঠেই দেখা হবে তার দল আফগানিস্তানের সাথে। তাই বাংলাদেশের প্র্যাকটিসটা নিজ চোখে দেখতে চলে আসলেন ফিল সিমন্স। ঠিক ১৩০ গজ দুরে সেন্টার উইকেটে নেট সেশন চলছিল বাংলাদেশ দলের। বোঝাই গেল, সেই নেট দেখতেই এসেছিলেন তিনি।

সেখানেই ফিল সিমন্সের সঙ্গে কথা হলো এ প্রতিবেদকের সাথে। ‘বাংলাদেশে অনেকবার গেছেন। প্রেস বক্সে দেখা হয়েছ বহুবার। নাম-ধাম না জানলেও চোখের দেখার পরিচয়টি ছিল। তাই দেখা হওয়া মাত্র বললেন, ‘হাই! হাউ আর ইউ। তোমাদের দলতো ভালই খেলছে।’

ছবি তুলতে চাইলে খুব বিনয়ের সাথে ‘না’ করলেন। তাও এক গাল হেসে। একদম হাসি মুখে। বিরাট শরীরের সিমন্স বরাবরই বিনয়ী। বাংলাদেশর কোচের সম্ভাব্য তালিকায় এক সময় নামও ছিল তার।

Advertisement

‘দেখো আমরা এই হিলটন হোটেলেই আছি। কাজেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম তোমার দলের প্র্যাকটিস দেখতে। এটা আসলে পুরোটাই অনানুষ্ঠানিক। তুমি প্রেসের লোক, ছবি তুলে নিউজ করবে। তখন সবাই জেনে যাবে আমি প্রেস বক্সে এসে বাংলাদেশের প্র্যাকটিস দেখেছি। আমি চাইলে যে কোন জায়গা থেকেই প্র্যাকটিস দেখতে পারতাম। এ মুহূর্তে প্রেস বক্স একটু খালি। তা দেখেই এসেছিলাম, যাতে নীরবে-নিভৃতে প্র্যাকটিসটা দেখতে পারি। ছবি না তুলে বরং এমনি দু-চার কথা বলো। পারলে সেটা লিখে দিও।’

তার দলের কথা জিজ্ঞেস করার আগে সিমন্স নিজে থেকেই তুললেন, ‘জান তো কাল আমরা ভারতের সাথে যে পিচে খেলেছি, আগামী দিন ঠিক একই উইকেটে খেলা হবে বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের।’

উইকেট কেমন মনে হয় আপনার? একটু কি স্লো? বল কি একটু থেমে ব্যাটে আসে? বিশ্বকাপের অন্য সব পিচের মত ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি নয় বুঝি?

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৪৩ ওয়ানডে আর ২৬ টেস্ট খেলা সিমন্স খেলোয়াড়ি জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চটপট বলে দিলেন, ‘নট রিঅ্যালি। আমার মনে হয় না উইকেট স্লো বা বল দেরিতে ব্যাটে আসে।’

তাহলে কাল ভারত আর আফগানিস্তান ম্যাচে যে রান উঠলো না, সেটা কেন? সিমন্সের ব্যাখ্যা, ‘আসলে দুই দলের বোলাররা ভাল বল করেছে। কোনোদিন এমনও হয়, যেদিন ব্যাটিং উইকেটেও দু’দলের বোলাররা বেশি ভাল বল করে বসে। তখন ভাল আর স্পোর্টিং পিচেও রান কম ওঠে। গতকালকের ম্যাচটি ছিল ঠিক তেমন একটি ম্যাচ। যেখানে আমাদের আর ভারতের দুই দলের বোলাররা ব্যাটসম্যানদের চেয়ে ভাল করেছে। তাই রান কম উঠেছে; কিন্তু দেখে নিও উইকেট মোটেই স্লো নয়।’

এআরবি/আইএইচএস/পিআর