শূন্য হওয়া বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপনির্বাচন আগামীকাল সোমবার (২৪ জুন)। এ নির্বাচনে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লড়াই হবে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। তবে জোটভুক্ত দল হিসেবে জাতীয় পার্টিও লড়াইয়ের একটি অংশে থাকছে।
Advertisement
বরাবর বিএনপির দখলে থাকা এই আসনটি রক্ষা করা এখন বিএনপির জন্য যেমন প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি জোটকে বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের প্রার্থী দেয়ার কারণে আওয়ামী লীগের জন্যও এটি একটি বড় পরীক্ষা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রত্যেকেই নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তবে সাধারণ ভোটাররা প্রথমে খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও এখন শেষ সময়ে বলছেন ভোট দেবেন দেখে শুনে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানা গেছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৪১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নির্বাচিত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেয়ায় শূন্য ঘোষণা করা হয় আসনটি। এখন উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত উন্নয়নের নানা ভাবনা তুলে ধরেছেন প্রার্থীরা।
Advertisement
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টি জামান নিকেতা (নৌকা), বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর (লাঙ্গল), মুসলিম লীগের রফিকুল ইসলাম (হারিকেন), বাংলাদেশের কংগ্রেসের মুনসুর রহমান (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ মণ্ডল (আপেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটারদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণা ছিল শহরমুখী। তাই ভোটের খুব একটা আমেজ নেই গ্রামাঞ্চলে। এ আসনের সবকটি কেন্দ্রে এবার ভোট হবে ইভিএমে। এরই মধ্যে মক ভোটিং হলেও খুব একটা সাড়া মেলেনি ভোটারদের।
বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসনের বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন- দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতা আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হতাশা জেঁকে বসেছে বিএনপিতে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে কবে মুক্তি পাবেন, এই বিষয়টি অনিশ্চিত। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাও নিশ্চিত নয়। এই অবস্থায় দলের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বক্তব্যে সমন্বয় নেই।
এসব নিয়ে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। তবে দলের শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে এ নিয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না কেউ। শুধু তাই নয় এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে যারা নানা হুঁশিয়ারি দিতেন তারাও এখন চুপ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
Advertisement
এ বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন সবাই এক ঐক্যবদ্ধ। বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনেও এখানে ধানের শীষের বিজয় হবে।
এদিকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর কিছুটা শূন্যতা সৃষ্টি হয় দলে। শেষ পর্যন্ত সংকট কাটিয়ে নির্বাচনমুখী হয়ে মাঠে থাকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। তারা সাধারণ ভোটাদের মন জয় করে ভোটের মাঠে জিততে চান।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী টি জামান নিকেতা বলেন, বগুরার মানুষ এখন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ। তারা ভুল করবে না। এ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নৌকার জয় হবে।
অন্যদিকে এই উপ নির্বাচনে বগুড়ার অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে রহসের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক মামলা ও বৈরি রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই হয় কারাগারে নয়তো আত্মগোপনে। তবে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা গোপনে ঠিকই চলছে। শুরু থেকেই জামায়াত বগুড়া উপ-নির্বাচনে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে।
বগুড়া পৌরসভার ১৯ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামায়াতের। পৌরসভার ৮, ১৩ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে জামায়াতের ভোটার সংখ্যা অনেক। নাম প্রকাশে না করে জামায়াত নেতারা বলছেন- জামায়াতকে অবমূল্যায়নের খেসারত দিতে হতে পারে বিএনপিকে।
লিমন বাসার/আরএআর/এমএস