শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত- এরকম আপ্তবাক্য আমরা শুনে আসছি। কিন্তু শিশুদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মাথায় রাখা হয় কিনা সেটি ভেবে দেখার বিষয়। বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষালাভ করতে গিয়ে পড়তে হয় এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। প্রথম পাঠ নিতে গিয়েই হতে হয় প্রশ্নের মুখোমুখি। তাও আবার ছাপানো প্রশ্ন। স্কুলে যাওয়ার আগেই রীতিমত লিখিত পরীক্ষা দিয়ে তাদের ভর্তির জন্য সুযোগ পেতে হয়। বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে নানা মহলে কথাবার্তা চললেও এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘ক্লাস ওয়ানে ছাপানো প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হবে কেন? যখনই একটা শিশুর ভর্তির বয়স হবে, তখনই তাকে ভর্তি করে নিতে হবে। শিক্ষা তার মৌলিক অধিকারগুলোর একটি।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ‘সে যদি ছাপানো প্রশ্নপত্র পড়ার মতো জ্ঞানই অর্জন করে থাকে, তাহলে স্কুলে তাকে আর কী পড়াবে?’প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্ন যথার্থ। ভুক্তভোগী অগুণতি অভিভাবকের কণ্ঠই ধ্বনিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কথায়। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।আর প্রাথমিক শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিই তার শিক্ষাজীবনের ভিত রচনা করে দেয়। কিন্তু একজন কোমলমতি শিক্ষার্থীকে যদি বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়েই হোঁচট খেতে হয় সেটা কোনো কাজের কথা হতে পারে না। শিক্ষার মধ্যে বাণিজ্যিক উপাদান ঢুকে পড়ায় একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে এক্ষেত্রে। সে কারণেই সৃষ্টি হয়েছে কোচিং সেন্টারের। আর তাদের ব্যবসা রমরমা করার জন্যই শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির অবাস্তব রীতি। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম শ্রেণিতে যে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে তার তো শিক্ষাজীবন শুরুই হয়নি। তাহলে সে শিখবে কি মায়ের পেট থেকে? ব্যাপারটাতো ঘোড়ার আগেই গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো। যদি তারা বাসাবাড়িতেই সব শিখে ফেলবে তাহলে এত এত স্কুল, শিক্ষক, শিক্ষিকার কী প্রয়োজন? বই বাণিজ্যও এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে অনেক অখাদ্য-কুখাদ্য বই চাপিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো যতটা না শেখানোর জন্য তারচেয়ে বই বিক্রি করার অসৎ উদ্দেশ্য থেকে। তাই শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার নিয়ে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ হওয়া জরুরি। শিশুদের আগামীদিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের সঠিক পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি। যে জাতি শিশুদের সঠিক পরিচর্যা করে না, তাদের ভবিষ্যতকে নিষ্কণ্টক করতে ব্যবস্থা নেয় না, তাদের অগ্রগতি থেমে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকার আজকের যে উন্নতি তার পেছনে রয়েছে শিশুদেরকে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তোলা। আমাদেরও সে পথেই হাঁটতে হবে।এইচআর/এমএস
Advertisement