অর্থনীতি

যা থাকছে সরকারি চাকুরেদের সমন্বিত বীমা ব্যবস্থায়

সরকারি চাকুরেদের চিকিৎসায় যাতে পরিবারের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে বা অন্যের কাছে হাত পাততে না হয় সেজন্য সমন্বিত বীমা ব্যবস্থা প্রণয়ন করছে সরকার। তবে এ জন্য উপকারভোগীদের নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। প্রিমিয়ামের এ অর্থ চিকিৎসা ভাতার সমপরিমাণ হবে। ক্ষেত্র বিশেষে বেশিও হতে পারে।

Advertisement

তবে বীমাকারী যদি অসুস্থ না হন তাহলে মেয়াদ শেষে পুরো টাকা ফেরত পাবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের জন্য গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স নামে একটি ব্যবস্থা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো বীমা নয়। তাই সকল কর্মচারীকে বীমার আওতায় আনার লক্ষ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থাটিকে সংস্কার করে জীবন বীমা কর্পোরেশনের সহযোগিতায় সমন্বিত বীমা ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হবে।

আরও পড়ুন > বীমার আওতায় আসছেন সরকারি কর্মচারীরা

Advertisement

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের বীমা পলিসি বাস্তবায়নে বেশ আগে থেকেই কাজ করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত ৩ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বীমা) অজিত কুমার পালের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জীবন বীমা কর্পোরেশন কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করবে তার রূপরেখা দেয়। কিন্তু ওই রূপরেখা অনুযায়ী কাভারেজ মাত্র পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আসে। বৈঠকে এটা বাড়িয়ে ৩০-৪০ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বীমা) অজিত কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সমন্বিত বীমা ব্যবস্থায় মূলত স্বাস্থ্য বীমাকে বড় আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে। আজকাল রোগ যেটা হয় সেটার খরচ এক-দুই লাখের নিচে হয় না। রোগ মানেই ক্যানসার, হার্টের সমস্যা। এসব অসুখের চিকিৎসায় ২০-৩০ লাখ, ক্ষেত্র বিশেষ তার চেয়েও বেশি অর্থ খরচ হয়। তখন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা নিতে হয়। এ থেকে উত্তরণে আমরা চাচ্ছি প্রতিটি সরকারি কর্মচারীর বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমা থাকবে। যাতে তারা অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য কারও কাছে হাত পাততে না হয়।’

আরও পড়ুন > ‘সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট চালু হলে বীমায় দুর্নীতি থাকবে না’

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি বীমা পলিসি চলু করব যেখানে অন্তত ৩০-৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত কাভারেজ থাকবে। এজন্য নির্দিষ্ট অংকের প্রিমিয়াম রাখা হবে। আমরা ইতোমধ্যে এসব নির্দেশনা দিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) একটি বীমা পলিসি চূড়ান্ত করতে বলেছি। এজন্য একচ্যুয়ারি (বিমা-গাণনিক) প্রয়োজন হয়। আইডিআরএ একচ্যুয়ারিদের সঙ্গে বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করছে। তারা স্কিমটি চূড়ান্ত করলেই আগামী অর্থবছরের প্রথম দিকে এটা বাস্তবায়ন করতে পারব।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, এ বীমার ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রিমিয়াম গ্রহককেই পরিশোধ করতে হবে। এখন যে হারে একজন সরকারি কর্মচারী চিকিৎসার ভাতা পান প্রিমিয়ামের হার তার থেকে বেশিও হতে পারে। এতে রাষ্ট্রের কোনো ধরনের অতিরিক্ত ব্যয় হবে না। আবার কর্মচারীদের কোনো ক্ষতিও হবে না। কারণ তাদের সঞ্চয়ের অর্থ প্রিমিয়াম দিয়ে বীমার আওতায় আসবে। যদি সেটা বীমার আওতায় থাকাকালীন অসুস্থ হয় তখন তিনি চিকিৎসার জন্য পাবেন। যদি অসুস্থ না হন তাহলে মেয়াদ শেষে পুরো টাকা ফেরত পাবেন।

২০১৯ সালের প্রথম দিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বীমা) অজিত কুমার পালের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কীভাবে সরকারি কর্মচারীদের বীমার আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেন জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী নূর।

আরও পড়ুন > বাজেটে বীমা খাতের নয় প্রস্তাব

প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, বীমার সুবিধাপ্রাপ্ত কর্মচারীকে নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। এর বিনিময়ে সরকারি কর্মচারীকে শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে নির্ধারিত হারে বেড ভাড়া, কনসালটেশন ফি, রুটিন ইনভেস্টিগেশন, মেজর অপারেশন ও ওষুধ ক্রয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ দেয়া হবে।

প্রিমিয়ামের হার এবং ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তির সর্বোচ্চ পরিমাণ বীমা অংকের ওপর নির্ধারিত হবে। এ বীমা অংকের ওপর ভিত্তি করে বাৎসরিক সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এবং বাৎসরিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ নির্ধারণ হবে। বার্ষিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ কর্মচারীদের বয়সের ওপর ভিত্তি করে পাঁচটি গ্রুপে ভাগ করা হবে। প্রতিটি গ্রুপের জন্য নয়টি বীমা অংকের স্লাবের ওপর ভিত্তি করে নয়টি ধাপে প্রিমিয়াম পরিমাপের প্রস্তাব করা হয়।

বার্ষিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ কর্মচারীর বয়সের ওপর ভিত্তি করে পাঁচটি গ্রুপে ভাগ এবং প্রতিটি গ্রুপের জন্য নয়টি বীমা অংকের স্লাবের ওপর ভিত্তি করে নয়টি ধাপে প্রিমিয়াম পরিমাপের প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ ৪৫ প্রিমিয়াম অংক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে বীমাগ্রহীতা কর্মচারী যেসব ক্ষেত্রে বীমার সুবিধা পাবেন না এরূপ ১৬ দফা সম্বলিত একটি তালিকা প্রস্তুতের প্রস্তাব দেন জীবন বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আরও পড়ুন > বীমার আওতায় যেসব সুবিধা পাবেন প্রবাসীরা

এসব কিছু করা হবে শ্রীলঙ্কার ‘আগ্রাহারা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি’র স্বাস্থ্য বীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তবে এ বীমার জন্য সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। প্রিমিয়ামের টাকা কাটা হবে চিকিৎসা ব্যয় থেকে। সরকারি চাকরিজীবীরা চিকিৎসা খরচ বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা করে ভাতা পান। এ ক্ষেত্রে পুরো টাকার অর্ধেক যাবে ফিক্সড ডিপোজিটের তহবিলে। বাকি টাকা যাবে প্রিমিয়াম খরচ হিসেবে। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি ক্ষতিপূরণের সর্বাধিকটা তথা ৪০ লাখ টাকা পেতে চান তাহলে তার ক্ষেত্র প্রিমিয়াম এক হাজার ৫০০ টাকার বেশিও হতে পারে। প্রিমিয়ামের টাকা থেকে হাসপাতালের ব্যয় বহন করা হবে। আর তহবিলের টাকা পাওয়া যাবে বীমার মেয়াদ শেষে।

এমইউএইচ/এএইচ/এমএআর/জেআইএম