ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শৈলকুপা উপজেলার এলাকা-৭ এর পরিচালক নুরুজ্জামান। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে মোট এক লাখ ৩৮ হাজার ১০০ টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু টাকা নেয়ার কয়েক বছর পার হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ আর দেন না তিনি। পরে এলাকাবাসীর চাপে সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের খুলুমবাড়িয়া গ্রামে পৃথক দুটি স্থানে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া হয়। গ্রাহকরা লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের টাকা বুঝে নেন। এ সময় ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন, উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামরুজ্জামান, সমিতি বোর্ডের সভাপতি হাফিজুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (সদস্য সেবা) মো রেজাউল করিম রাজিব উপস্থিত ছিলেন।
টাকা বুঝে পাওয়া গ্রাহক আকামদ্দিন মন্ডল বলেন, চার বছর আগে আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয় নুরুজ্জামান। সে সময় আমিও ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ আর দেয়নি। চার বছর পর এখন শুনলাম তিনি গ্রামের মানুষের কাছ থেকে মিথ্যা কথা বলে টাকা নিয়েছিল। তবে এখন ধরা খেয়ে আমাদের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। আমি আমার টাকা বুঝে পেয়েছি।
জোসনা সরকার নামের এক বিধবা বৃদ্ধা বলেন, আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ দেয়ার নামে ৪ হাজার টাকা নিয়েছিল। আজ আমি সেই চার হাজার টাকা ফেতর পেয়েছি। সঙ্গে বিদ্যুতও পেয়েছি।
Advertisement
ওয়াজেদ মোল্লা, বিসারত আলী, বাবর আলী, মো. কামাল উদ্দিনসহ আরও অনেকে বলেন, বিদ্যুৎ দেয়ার নাম করে আমাদের কাছ থেকে যে ঘুষের টাকা নিয়েছিল, সে টাকা ফেরত পেয়ে সবাই আনন্দিত। টাকা ফেরত দেয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এ সুযোগে ওই এলাকার এক শ্রেণির দালালচক্র বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে টাকা আদায় করে আসছে। এমন খবরের ভিত্তিতে উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের খুলুমবাড়িয়া গ্রামে গোপন অনুসন্ধান চালানো হয়। কয়েক দিনের অনুসন্ধানে এ খবরের সত্যতা বেরিয়ে আসে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শৈলকুপা ৭ নম্বর এলাকা পরিচালক নুরুজ্জামানের নাম প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে আসছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
তিনি আরও জানান, দেড় শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। এ টাকা কৌশলে ঘুষ গ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করে গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। গ্রাহকরা খবর পেয়ে এলাকায় জড়ো হন। লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য অপেক্ষা করেন গ্রামবাসীরা। এ সময় ঘুষ গ্রহীতা এলাকা-৭ এর পরিচালক নুরুজ্জামান নিজে গ্রাহকদের হাতে সেই টাকা তুলে দেন।
ওই দিন দুর্নীতি বিরোধী ব্যানার ঝুলিয়ে ১২৬ পরিবারকে এক লাখ ৩৮ হাজার ১০০ ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানান আলতাফ হোসেন।
Advertisement
গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন নুরুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিন বছর আগে খুলুমবাড়িয়া গ্রামের দক্ষিণপাড়া ও বাগদিপাড়ার অন্তত ১৫০ জনের কাছ থেকে মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে গড়ে ৭৫০ টাকা হারে ঘুষ নেন। চলতি বছরে এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়ে এবং তিনি ফেঁসে যান। নিরুপায় হয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানান নুরুজ্জামান। অনেকেই পাওনার চেয়ে বেশি টাকা দাবি করেছে বলেও জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএসএইচ