যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যগতভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে চাষ হয় আমন ধানের। অন্যান্য ধানের চেয়ে এ ধান চাষে খরচও হয় কম। তবে আমন ধান চাষের জন্য সবাই বীজতলা তৈরি না করায় নির্ভর করতে হয় পাইকারী বাজারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসা বীজের উপর। আর এমনই একটি জমজমাট বীজের হাট পিরোজপুরের কাউখালীর সন্ধ্যা নদীর তীরে। জানা গেছে, আমন চারার সংকট মোকাবেলা করতে পিরোজপুরের কাউখালীতে প্রতি বছর আমন মৌসুমে ভাসমান আমন চারার হাটে আসেন কৃষকরা। এখান থেকেই কৃষকরা চাহিদা মতো আমন চারা সংগ্রহ করেন। এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ আমন চারা বিক্রির ভাসমান হাট শুক্রবার থেকে কাউখালীর সন্ধ্যা নদী তীরে শুরু হয়েছে। কাউখালী শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার চিরাপাড়া নদীতে সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার বসছে আমন চারার ভাসমান হাট। আগামী তিন সপ্তাহ সারা উপকূল জুড়ে আমন চারা মোকাবেলায় বিপন্ন কৃষকরা কাউখালীর ওই ভাসমান চারার হাটে জড় হবেন। এখন মাঠে মাঠে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন বীজ রোপণের জন্য। তবে বৈরী আবহাওয়া ও বীজতলা তৈরির সময় মাঠে অত্যধিক পানি থাকায় অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে অনেক কৃষককেই নির্ভর করতে হচ্ছে বাজারের বীজের উপর। প্রতি হাটের দিন কাউখালীর ভাসমান আমন চারার বাজারে কয়েক লাখ টাকার আমন চারা বিক্রি হয় বলে বীজ ব্যবসায়ী ও বীজ ক্রেতারা জানিয়েছেন। অন্যান্য এলাকার তুলনায় কাউখালীর জমি উচু হওয়ায় বীজের উৎপাদন ভাল হয়। ওই এলাকায় আমনের বীজ সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বীজ কিনতে কাউখালীর ভাসমান বীজের হাটে আসেন। শুধু পিরোজপুর নয় বরং বরগুনা, ঝালকাঠি ও মাদারীপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ীরা এই হাটে বীজ কিনতে আসেন। পরিবহনে সুবিধার কারণে নৌকা ও ট্রলারে করে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা এই হাটে আসেন। উপজেলার জয়কুল গ্রামের কৃষক এনায়েত ও বীজ ব্যবসায়ী লতিফ খসরু জাগো নিউজকে জানান, গত শুক্রবারের ভাসমান বীজের হাটে ৮০ গণ্ডা (মঠি) মানে একপণ আমন চারা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে বিক্রয় হয়েছে। এ বীজ আবার অন্য অঞ্চলে আরো বেশি দামে বিক্রয় করা হবে। ভাল মানের চারা পাওয়া যায় বলে তিনি এখান থেকে বীজ কিনছেন।কাউখালী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অর্পূব লাল সরকার জাগো নিউজকে বলেন, এবার উপকূলীয় অঞ্চলে আমন চারার সংকট চলছে। তবে কাউখালীতে এ সংকট নেই। কাউখালী অঞ্চলের মাঠ অন্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক উচু। ফলে জলাবদ্ধতাও কম। তাছাড়া এখানে বাণিজ্যিকভাবেই কৃষক আমন চারা উৎপাদন করছেন। ফলে কাউখালীতে গড়ে উঠেছে আমন চারার ভাসমান বাজার।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পিরোজপুরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন চাষাবাদ মৌসুমে জেলার সাত উপজেলার ৫২টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পৌর এলাকায় ৫৭ হাজার ৬ শত ১৭ হেক্টরে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৩ হাজার ১ শত ৪০ মে. টন। আমন ধান কর্তন, মাড়াই এবং ধান থেকে চাল তৈরির পর হিসেব করে দেখা গেছে যে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার ৬৪ মে.টন বেশি চাল উৎপাদিত হয়েছে। পিরোজপুর সদর উপজেলার ৯ হাজার হেক্টরে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৯ শত ২০ মে. টন। হয়েছে ১৭ হাজার ৯ শত ৪৫ মে. টন। অনুরূপভাবে জিয়ানগরে ৫ হাজার ৫ শত হেক্টরে ৯ হাজার ৬ শত ১০ মে. টনের বিপরীতে ৯ হাজার ৭ শত ৩৮ মে. টন, কাউখালীতে ৪ হাজার ২ শত হেক্টরে ৭ হাজার ১ শত ৪৪ মে. টনের বিপরীতে ৭ হাজার ৭ শত ৫০ মে. টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।এছাড়া নেছারাবাদে ৬ হাজার ৫ শত হেক্টরে ১১ হাজার ২ শত ৬০ মে. টনের স্থলে ১৪ হাজার ২ শত ২০ মে. টন, নাজিরপুরে ৬ হাজার হেক্টরে ১০ হাজার ৯ শত ৭০ মে. টন এর বিপরীতে ১২ হাজার ৯ শত ৩৩ মে. টন, ভান্ডারিয়ায় ৭ হাজার ৫ শত হেক্টরে ১৩ হাজার ৪ শত ৪৫ মে. টনের স্থলে ১৬ হাজার ১ শত ১৮ মে. টন এবং মঠবাড়িয়ায় ১৮ হাজার ৯ শত ১৭ হেক্টরে ৩৪ হাজার ৭ শত ৯১ মে. টনের বিপরীতে ৩৮ হাজার ৫ শত মে. টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অরুণ রায় জাগো নিউজকে জানান, আমনের দুটি জাতের মধ্যে উফশী জাতের ফলন স্থানীয় জাতের চেয়ে বেশি হয়েছে। বোরো চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৫ শত ৪৬ হেক্টরে ৭৯ হাজার ১ শত ৩৭ মে. টন । এই লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম হবে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন। এসএস/এমএস
Advertisement