দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এক বছরে (২০১৮ সালে) প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শনিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
Advertisement
মন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে গত বছরে (জানুয়ারি ২০১৮-ডিসেম্বর ২০১৮) ছয় হাজার ১৬৩টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ১ হাজার ১৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ মওকুফ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। এ ব্যাংকটি ২ হাজার ৮টি ঋণের বিপরীতে ৪৯৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে।
আর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কোনো সুদ মওকুফ করেনি। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে কৃষি ব্যাংক ৬৬টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৪৩৫ কোটি ৯৬ লাখ, রূপালী ব্যাংক ২০৩টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ১৩৪ কোটি ২৬ লাখ, সোনালী ব্যাংক ১৪টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৭৩ কোটি ৭৩ লাখ, জনতা ব্যাংক ২ হাজার ৪৭৩টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৫৩ কোটি ৮১ লাখ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক হাজার ৩৮০টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৪ কোটি ৩৫ লাখ এবং বেসিক ব্যাংক ১৯টি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে ঋণ খেলাপির কারণ তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নিয়ন্ত্রণ বহির্ভুত কারণে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঋণ খেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক কর্তৃক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে ঋণ গ্রহীতা নির্বাচন না করাও অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, ঋণের বিপরীতে গ্রাহক কর্তৃক জামানতের অপর্যাপ্ততা থাকলে, একই সম্পদ একাধিক ব্যাংকে (বা একাধিক ঋণের বিপরীতে) জামানত রাখলে বা অনেক ক্ষেত্রে জামানতের মূল্য বাজারমূল্য হতে বেশি প্রদর্শন করলে ঋণটির ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে ঋণটি ভবিষ্যতে কু-ঋণে পর্যবসিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। মন্ত্রী জানান, ঋণ মঞ্জুরির সময় গ্রাহকের সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস/দলিলাদি ব্যাংক কর্তৃক সংগ্রহ ও সঠিকতা যাচাই করা না হলে ঋণঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং সংশ্লিষ্ট হিসাবটি খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আরেকটি কারণ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক তহবিল ভিন্নখাতে প্রবাহেরও অবকাশ থাকে।
Advertisement
তিনি জানান, গ্রাহকের ব্যবসায়িক প্রয়োজনীয়তা ও সামর্থ বিবেচনা না করে তার অনুকূলে অতিরিক্ত ঋণ সুবিধাদি যেমন-নবায়ন, ঋণসীমা বৃদ্ধি, পুন:তফসিলিকরণ, পুনর্গঠন ইত্যাদি) প্রদান করাও খেলাপি ঋণকে উৎসাহিত করে। সর্বশেষ কারণ তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লে ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়।
এইউএ/এমআরএম/এমএস