ঝিনাইদহের সহস্রাধিক ক্ষুদ্র খামারি কোরবানি ঈদের বাজার ধরতে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। পর পর চার বছর লোকসান দিয়ে এবার ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকার কারণে এ বছর গরুতে লাভ হবে এমনটি আশা করছেন গরু খামারিরা।ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২০৬, হরিণাকুন্ডুু উপজেলায় ২৭০, শৈলকুপায় ৯০, কোটচাঁদপুরে ১৫৭, মহেশপুরে ১০৯ এবং কালীগঞ্জে ২০৭টি খামার আছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিজয়পুর, শৈলকুপা উপজেলার ভাটই, কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলি মলিকপুর, নাটোপাড়া, হরিণাকুন্ডুর জোড়াপুকুর, মহেশপুরের হামিদপুর গ্রাম ঘুরে বেশকিছু মাঝারি খামার চোখে পড়ে।হরিণাকুন্ডু উপজেলার তৈলটুপি গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে জানান, তাদের গ্রামে ৮০টি পরিবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্রসবিড জাতের গরু পালন করছে। তিনি নিজেও পালন করছেন ৪/৫টি গরু। একই গ্রামের বজলুর রহমান জোয়ার্দার ও তার ছেলে আদিল উদ্দীন জোয়ার্দার মিলে সবচেয়ে বড় গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে তুলেছেন। তাদের খামারে হরিয়ানা, নেপালি ও ক্রসবিড জাতের ১৩টি গরু রয়েছে। দাম ভাল থাকলে এ বছর ৫টি গরু ৭৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে বাবা-ছেলে আশা প্রকাশ করেন। বজলুর রহমান জোয়ার্দার জাগো নিউজকে জানান, গরু পালন তার নেশা। গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চোরাই পথে ভারত থেকে গরু আসায় ভাল দামে গরু বিক্রি হয়নি। লোকসানের পরও এ বছর তিনি ১৫টি গরু মোটাতাজা করেছেন। ছেলে আদিল উদ্দীন জোয়ার্দার জাগো নিউজকে জানান, ভূষি, চিটেগুড়, খুদকুড়া ও খৈলের দাম বাড়ার পরও তাদের পরিবার পনের বছর ধরে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। পরিবারে তার মা, ভাই ও স্ত্রী গরু পালনে সহায়তা করেন।তবে গরু মোটাতাজাকরণে তারা কোনো ইনজেকশন ব্যবহার করেন না বলে দাবি করেন। তাদের মতে, কৃষিকাজে তারা যে গম, খৈল ও ভুষি পান তা থেকেই গরুর খাবার যোগান দেন। তাছাড়া যারা ঈদের ১/২ মাস আগে গরু কিনে পালন করেন তারাই ইনজেকশনে গরু মোটাতাজা করেন। ঝিনাইদহে সরকারিভাবে বড় ধরনের কোনো খামার বা গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প না থাকলেও গ্রামের স্বল্প আয়ের মানুষগুলো বাড়তি লাভের আশায় কোরবানি ঈদের ৬ মাস আগ থেকেই গরু মোটাতাজায় অর্থ ব্যয় করেন। আর এভাবেই ৬টি উপজেলায় ১ হাজার ৩৯টি ছোটবড় খামার গড়ে উঠেছে।ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিজয়পুর উত্তরপাড়ায় নারায়ণগঞ্জের শিল্পপতি হাবিবুর রহমান ৪৫টি গরু নিয়ে খামার গড়ে তুলেছেন। কোরবানির সময় তিনি বাজারে নয়, বন্ধুদের কাছে গরু বিক্রি করেন। তারা জানান, ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা গরুর পরিচর্যা করেন। সম্পূর্ণ দেশি ও প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে তাদের খামারের গরু মোটাতাজা করা হয়। খামারের কেয়ারটেকার আফান উদ্দীন ও জুয়েল জাগো নিউজকে জানান, ৬ মাস আগে খামারের প্রতিটি গরু ৮০ থেকে এক লাখ টাকায় কেনা হয়। ঈদ মৌসুমে প্রতিটি গরু তিন লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে বলে তারা আশা করেন। কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলি মলিকপুর গ্রামের তানজিল হোসেন প্রিন্স দুগ্ধ খামারের পাশাপাশি ২০টি গরু নিয়ে মাঝারি ধরনের খামার গড়ে তুলেছেন। এ বছর প্রতিটি গরু দুই লাখ টাকা করে বিক্রি করা যাবে বলে তিনি জাগো নিউজকে জানান।ঝিনাইদহ প্রাণিসম্পদ বিভাগের এনএটিভি প্রকল্পের পল্লি চিকিৎসক শুভাঙ্কর ঘোষ জাগো নিউজকে জানান, এক সময় ডেকসামেথাসন বা এসটেরয়েড জাতীয় হরমোন বৃদ্ধির ওষুধ খাওয়ানোর প্রচলন ছিল। এই ওষুধ সেবনের ফলে গরুর মাংস দ্রুত বৃদ্ধি হলেও গরুর জীবন বিপন্ন হতো। এখন তো খামারিরা ৬/৭ মাস আগেই গরু কিনে পালন করেন। তাই তারা গরু মোটাতাজাকরণে বেশ সময় পাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় খামারিদের বিপদজনক পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কানাইলাল স্বর্ণকার জাগো নিউজকে জানান, দানাদার খাদ্য যেমন খৈল, ভুষি ও খুদকুড়ার দাম বাড়ার কারণে জেলায় খামারির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার দাম ভাল থাকায় ক্ষুদ্র খামারিরা বেশ উজ্জীবিত। তবে জেলায় প্রচুর ঘাস হয়। তাই গরুর খামার করার এখানে যথেষ্ট সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা যারাই খামার করছেন, তারা কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। এসএস/এমএস
Advertisement