মানুষের পছন্দের কোনো শেষ নেই। একেক মানুষ একেক ধরনের পেশা পছন্দ করেন। তেমনি এক ভিন্ন পেশার মানুষ ওয়াহেদ ব্যাপারী (৬২)। গলায় গামছা, পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি। সারাদিন ঘুরে বেড়ান গোরস্থানে। খোঁজ নেন কোন কবরের কি অবস্থা। ঠিকঠাক করেন ক্ষতিগ্রস্থ কবরগুলো। কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলেই ডাক পড়ে তার।ওয়াহেদ ব্যাপারী জয়নগর হাজীপাড়ার মৃত চাঁদ আলী প্রমানিকের ছেলে। জীবনের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে কবর খোঁড়ার কাজ করছেন সদা হাস্যজ্জল এই ব্যক্তিটি। বয়সের ভার এখনও তাকে কাবু করতে পারেনি। মৃত্যুর কবর শুনলেই ছুটে চলেন সেখানে। শুধু নিজ গ্রামে নয় পার্শ্ববর্তী কোনো গ্রামে মৃত্যুর সংবাদ পেলেও দা, কোঁদাল ও শাঁবল নিয়ে ছুটে যান সাহায্য করতে। উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর হাজীপাড়ার বাসিন্দা ওয়াহেদ আলী ব্যাপারী প্রায় ৪৫ বছর ধরে কবর খোঁড়ার কাজে জয়নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে ২শ` ১৮টি, চরসাহাপুরে ৩০টি, হাজীপাড়া পারিবারিক কবরস্থানে ৯টি, গাংমাথালে ২টি, মানিকনগর কবরস্থানে ৬টি, বাগবাড়ি কবরস্থানে ১টি-সহ বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত প্রায় ৩শ` ৫০ জনের কবর খোঁড়ার কাজ করেছেন। মানুষ সেবাই যেন তার কাছে সব চেয়ে বড়। তাই তিনি কবর খোঁড়ার মধ্য দিয়ে মানুষ সেবা করে যেতে চান।ব্যক্তি জীবনে ওয়াহেদ ৬ সন্তান নিয়ে কাঠাল, হলূদ ও লেবুর ছোটখাট ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু বয়সের ভারে হাট বাজারে এখন আর আগের মতো চলাফেরা করতে পারে না। সঙ্গে রয়েছে ডায়বেটিশ, পেশারসহ বার্ধক্য জনিত সমস্যাও।ওয়াহেদ ব্যাপারী জানান, আমি দরিদ্র হওয়ায় মানুষকে অন্য কোনো ভাবে সেবা করার সুযোগ না থাকায় কবর খুঁড়ে মানুষের সেবা করতে চাই। শুধু মানুষের ভালবাসা চান। চাই মানুষের সেবা করতে। তবে বয়স হয়েছে, আগের মতো আর চলতে পারি না। সরকারের বয়স্ক ভাতা, ভিজিএফ কিংবা ভিজিটি কার্ড পেলে ভালো হতো।তিনি আরো জানান, ছলিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা, জন নন্দিত নেতা ও ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টু ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান একটু নজর দিলে আমার বয়স্ক ভাতা, ভিজিএফ কিংবা ভিজিটি কার্ড পেতাম।ছলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান জানান, ওয়াহেদ আলী মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করেছেন। সে বিধি মোতাবেক ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন জানালে, তার ব্যাপারে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টু জানান, ওয়াহেদ আলী ব্যাপারী তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের কবর খুঁড়ে সেবা করছেন। ওয়াহেদ আলীকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।আলাউদ্দিন আহমেদ/আরএস/এমএস
Advertisement