জাতীয়

জলজটের আশঙ্কায় নগরবাসী, সেবা সংস্থার অভয়

বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতে সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে। এক ঘণ্টারও কম সময়ের বৃষ্টিতে যে জলজট সৃষ্টি হচ্ছে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন কার্যক্রমে। তাই নগরবাসীর প্রশ্ন- বর্ষা আসতে না আসতেই এমন অবস্থা সামনে না জানি কত দুর্ভোগ? তবে সেবা সংস্থাগুলো অভয় দিয়ে বলছে, বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

Advertisement

যার অংশ হিসেবে রাজধানীর ১৫টি খালের ২০ কিলোমিটার ও ৩০০ কিলোমিটার স্টর্ম ওয়াটার পাইপ ড্রেন পরিষ্কার করেছে ঢাকা ওয়াসা। এ ছাড়া চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি অপসারণ পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থাটির।

 আরও পড়ুন : সামান্য বৃষ্টিতে সচিবালয়ে জলাবদ্ধতা

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ড্রেনগুলো পরিষ্কার করছে। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, ওয়াসাকে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্পের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে এবারও নগরীতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

Advertisement

আষাঢ়ের ৬ষ্ঠ দিন বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে এক ঘণ্টারও কম সময়ের বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে রাজধানীর ব্যাংক পাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিল ও দিলকুশায় হাঁটপানি জমে যায়। জলজট দেখা দেয় বঙ্গভবনের পাশের সড়কেও। এ সময় ওই সড়কে যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

দিলকুশা শাখার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহেরুল্লাহ মিঠু অভিযোগ করেন, সামান্য বৃষ্টিতেই দৈনিক বাংলা-মতিঝিল সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। এ ছাড়া দিলকুশার বক চত্বর সংলগ্ন রাস্তায়ও পানি জমে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিটি সেন্টারের সামনে থেকে একটি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কোনো রিকশাও এ সময় পাওয়া যাচ্ছিল না। মাত্র বর্ষাকাল শুরু। এখনই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে সামনে না জানি আরও কত দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

মেহেরুল্লাহ মিঠুর মতো আরও অনেকেই একই অভিযোগ করেন।

ওয়াসা বলছে, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্টর্ম ওয়াটার পাইপ ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ২৪৯ কিলোমিটার ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে চারটি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী পাম্পের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হবে। এ ছাড়া গত বছর ১৭টি খালের ৩০ কিলোমিটার পুনঃখনন করে ২ লাখ ৬২ হাজার ঘনমিটার মাটি অপসারণ করা হয়। এতে খালের গভীরতা বাড়ায় পানির ধারণক্ষমতা বেড়েছে। পানি যেন দ্রুত ড্রেন দিয়ে চলে যেতে পারে সে জন্য স্টর্ম ওয়াটার পাইপ পরিষ্কার করা হচ্ছে। রাস্তার পানি যেন দ্রুত পাইপ ড্রেনে প্রবেশ করতে পারে সে জন্য ৭০০টি ক্যাচপিট পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এবার তেমন জলাবদ্ধতা হবে না।

Advertisement

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজধানীতে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমরা কাজ করছি। ওয়াসার ৩৭০ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন, ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট, চারটি স্থায়ী পাম্পিং স্টেশন এবং ১৬টি অস্থায়ী পাম্পিং স্টেশন আছে। আমাদের কাজ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা।’

এদিকে সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসনে কালশী থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত বাইপাস পাইপ ড্রেন সংযোগ উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কালশী থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১৮৮ মিটার দীর্ঘ বাইপাস পাইপ ড্রেন সংযোগের উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনকালে এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ পাইপ ড্রেন সংযোগের ফলে কালশী এলাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে যাবে, জনদুর্ভোগও অনেক কমে আসবে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য এ অঞ্চলের সব খালকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ওয়াসাকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ডিএনসিসি এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয় এমন সব স্থানে ওয়াসা এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

অন্যদিকে ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, তাদের এলাকার পানি নিষ্কাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫১টি স্লুইস গেট রয়েছে। এসব গেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পানি অপসারণের আরও একটি মাধ্যম বক্স কালভার্ট। নগরীর অধিকাংশ বক্স কালভার্ট ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি অপসারণে সমস্যা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এ বছর বর্ষায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকাগুলোয় অস্থায়ী পাম্প বসাতে ঢাকা ওয়াসাকে সুপারিশ করেছে সিটি কর্পোরেশন।

এএস/এনডিএস/পিআর