জাতীয়

পুরনো আইফোন নতুন বলে বিক্রি করছে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার

পুরনো আইফোন নতুন বলে বিক্রি করে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করছে ঢাকায় আইফোনের ডিলার গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত সেটগুলো দোকানে ফেরত দেয়ার পর সেগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে এনে ক্রেতাদের কাছে নতুন হিসেবে বিক্রি করে রীতিমতো প্রতারণা করে যাচ্ছে মোবাইল ফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি।গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি জাগো নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। দুই পর্বে থাকছে আদনান রহমানের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।আজ থাকছে প্রথম পর্ব :রাজধানীর গুলশানের রূপায়ন গোল্ডেন এজের গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের আউটলেটে ধরা পড়লো তাদের এই প্রতারণা। ঢাকায় এর সাতটি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ক্রেতা সেজে ব্রাঞ্চটিতে একটি আইফোন সিক্স প্লাস হ্যান্ডসেট কিনতে গেলে চোখে পড়ে তাদের প্রতারণা। ইন্ট্যাক্ট বাক্সের ভেতরে থাকা আইফোন সেটটির বের করতেই সিম ট্রে একটি টি-মোবাইল ব্র্যান্ডের সিম কার্ড দেখা যায়। টি-মোবাইল যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত মোবাইল অপারেটর। তারা অভাবনীয় কম মূল্যে তাদের সিমের সঙ্গে আইফোনের প্যাকেজ বিক্রি করে।একই ধরনের ঘটনা ঘটে রিফাত হাসান কনক নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। গত ১৩ আগস্ট সেট কিনতে গেলে সেটের বাক্সের ভেতরে সিম কার্ড থাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় রিফাত নামে ওই ক্রেতার। কনক জাগো নিউজকে জানান, সাধারনত ইন্ট্যাক্ট বাক্সে থাকা আইফোনের ভেতরে কোনো সিম থাকার কথা নয়। তবে আমার সেটের ভেতর থেকেও একটি টি-মোবাইলের সিম পাওয়া গেছে।জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইনট্যাক্ট হ্যান্ডসেটের ভেতর থেকে সিম বের হতে পারে না। যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে ক্রেতার উচিৎ গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের কাছে ওই হ্যান্ডসেট ক্রয়ের রশিদ চাওয়া।ভুয়া হ্যান্ডসেট বিক্রির দায়ে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইন্ট্যাক্ট সিম বের হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম জাগো নিউজকে বলেন, এমনটি হওয়ার কথা না। হতে পারে তারা রিফাব্রিশড হ্যান্ডসেট আমদানি করছে।গ্রাহক প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইফোন এবং টি-মোবাইলের চুক্তি অনুযায়ী হ্যান্ডসেটের টি-মোবাইলের একটি সিম দেয়া থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের আইফোন ক্রেতারা চাইলে এই সিম অ্যাক্টিভেট করতে পারেন। না চাইলে না পারেন।তবে গত ২৯ জুলাই একই শোরুম থেকে আইফোন সিক্স প্লাস কেনেন আহসানুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা। যদি গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার কর্তৃপক্ষের কথা ঠিক হয় তাহলে সব সেটের ভেতর সিম থাকার কথা। আহসানুর রহমান জানান, তার সেটের ভেতরে কোনো সিম ছিলো না।গ্যাজেড অ্যান্ড গিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথার অমিল পাওয়া গেলো খোদ প্রতিষ্ঠানটির শোরুমের বিক্রয় কর্মকর্তার সঙ্গে। গুলশান ব্রাঞ্চের এক বিক্রয় কর্মকর্তা বলেন, এটা ডামি (নকল) সিম কার্ড। কিছু সেটে থাকে, কিছু সেটে থাকে না।জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্যাকেজভুক্ত, ব্যবহৃত ও নিম্নমানের মোবাইল হ্যান্ডসেট ক্রয় করে। সেগুলোকে ইন্ট্যাক্ট করে বাংলাদেশে নতুন বলে বিক্রি করে। এ কারণে আইফোনসহ বিভিন্ন সেট বিক্রিতে তারা কোনো ধরনের গ্যারান্টি-ওয়্যারান্টি দেয় না।ইমদাদুল হক নাঈম নামে আরেক ক্রেতা জানান, স্যামসাং এস সিক্স সেট কিনতে গেলে তারা আমাকে একটা সেট দেখায় যেটার কোনো ইন্টেক্ট বক্স ছিলনা। খোলা একটা বক্স থেকে সেটটা বের করে উপরের প্লাস্টিক কভার সরিয়ে আমার হাতে দেয়। কিন্তু সেটা তাদের করার কথা ছিল না। সেটের অবশ্যই ইনেক্ট বক্স থাকবে এবং সেটা তারা কখনই খুলার কথা না। সিফাত নামে আরেক ক্রেতা অভিযোগ করেন, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার থেকে ইন্ট্যাক্ট সেট কিনেছি। হ্যান্ডসেটের ফোনবুকে অনেক বিদেশির নাম ও ফোন নম্বর সেভ করা ছিল। কারণ বুঝতে পারিনি।অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিমানবন্দরের যাত্রীদের দ্বারা হ্যান্ডসেট আনায়। এভাবে সরকারকে রাজস্ব না দিয়েই তারা সেটগুলো অবৈধভাবে বিক্রি শো-রুমে তুলে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।জানা গেছে, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার চীন থেকে যেসব স্যামসাং, সনি এক্সপেরিয়া এবং নকিয়ার সেট আনায় সেগুলোর কোনোটিই কোম্পানি থেকে সরাসরি কেনে না তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। তারা এসব ব্র্যান্ডের নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি করে। এমনকি গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে নকল সেট উদ্ধারে ভ্রাম্যমাণ আদালত যে অভিযানটি চালায় সেসময় আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের শো-রুমগুলো।এ ধরনের ঘটনা যদি কারো সঙ্গে ঘটে থাকে তবে তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সরোয়ার আলম।গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার নিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা লিখে পাঠান dhaka.adnan@gmail.com ইমেইলে। আমরা তা জাগো নিউজে তুলে ধরবো।এআর/বিএ/এমএস

Advertisement