খেলাধুলা

‘অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ ১০ ওভারই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট’

অনেকবার বলা হয়েছে, লেখা হয়েছে মাশরাফির মধ্যে আবেগ নেই তেমন। চরম বাস্তববাদি নড়াইলের এ মাঝ তিরিশের সাহসী সেনাপতি। সাফল্য-জয় তাকে উদ্বেলিত করে না, আবেগ-উত্তেজনায় শিহরিত-রোমাঞ্চিত হন না।

Advertisement

কারণ তিনি জানেন, দিনের পরই যেমন রাত আসে, সুখের ওপারেই তেমন দুঃখের অবস্থান। ঠিক একই ভাবে আবার পরাজয়ে কষ্ট পেলেও শরীরী অভিব্যক্তিতে তার প্রকাশ থাকে না। হারের যন্ত্রণা পোড়ালেও হতাশায় মুষড়েও পড়েন না তেমন।

আজও (বৃহস্পতিবার) ঠিক সেই রূপ মাশরাফির। খেলা শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কথা বলার কয়েক মিনিট পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও আসলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চোখমুখ বলে দিচ্ছিলো ভিতরে না পারার দুঃখ আছে। না পারার কারণটাও তার খুব ভাল জানা।

তাই তো কোনরকম ভনিতা আর ওজর অজুহাত দাঁড় না করিয়ে শুরুতেই বলে দিলেন, ‘আসলে আমাদের জন্য ৩৮২ অনেক রান। টার্গেটটা বেশি বড়। আমার মনে হয় আমরা এখন ৩২০ থেকে ৩৩০ রান তাড়া করে জেতার সামর্থ্য রাখি। মনের দিক থেকেও ঐ স্কোর অতিক্রমের একটা বিশ্বাস জন্মেছে। কিন্তু সাড়ে তিনশর ওপরে বিশেষ করে ৩৮০+ রান যে অনেক বেশি। আসলে সেই বড়সড় স্কোর টপকে যাওয়ার মত দল এখনো হইনি আমরা।’

Advertisement

অধিনায়কের এমন কথা শুনে আবার দুঃখ পেয়েন না যেন। ভক্ত ও সমর্থকদের কিন্তু আবেগ বেশি। তারা হতাশও হন বেশি। ভুলে গেলে চলবে না ক্রিকেটাররা মাঠে খেলেন। লড়াই করেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি বোঝেন। প্রতিপক্ষ্যের ওজন মাপা থাকে। তাদের শক্তি ও সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণাও তাই পরিষ্কার।

মাশরাফিও তার নিজের দলের শক্তি ও সামর্থ্য ভালই জানেন। তাই শুরুতেই বলে দিয়েছেন টার্গেটটা আসলে বেশি বড়। মোটামুুটি তার দলের সাধ্যের বাইরে। সেটা কোন ব্যর্থতা নয়। বিশ্বকাপে আগে কোনদিন অত বড় রান তাড়া করে জেতেনি কোন দল। একদিনের ক্রিকেটেই ৩৮০+ স্কোর তাড়া করে জেতার ঘটনা মাত্র একটি।

তাই মাশরাফির মূল্যায়ন, মোটেই অমূলক নয়। ঘষা বাস্তব। অনেক কথার ভিড়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য একটি কথা বলেছেন বেশ জোরেশোরে। তার ব্যাখ্যা, উপলব্ধি ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ হলো, বাংলাদেশ আসলে শেষ ১০-১২ ওভারে গিয়ে ম্যাচ খুইয়ে ফেলেছে।

তাই তার মুখে এমন সংলাপ, ‘আমাদের ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ ১০-১২ ওভারে। ঐ সময় তারা অনেক বেশি রান করে ফেলেছে।’

Advertisement

মাশরাফি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন, তার দলের লক্ষ্য ছিল অস্ট্রেলিয়াকে ৩০০’র মধ্যে আটকে রাখা। সর্বোচ্চ ৩২০ পর্যন্ত হলেও তাদের হাতে ম্যাচ থাকতো- এমন বিশ্বাস মাশরাফির।

তাই মুখে এমন কথা, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিলো ২৮০ থেকে ৩০০ রানের মধ্যে আটকে রাখা। জানি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অনেক সমৃদ্ধ ও লম্বা। তবে আমরা চেয়েছিলাম ৩০০’র মধ্যে ধরে রাখতে।’

সেটা কেন সম্ভব হয়নি? টাইগার ক্যাপ্টেনের ব্যাখ্যা, ‘আমরা শুরুতে ওদের উইকেট নিতে পারিনি। সেটাই আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে।’

ম্যাচের পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে তার মনে হয়েছে, শুরুতে উইকেট নিতে না পারা, সাকিবের উইকেট না পাওয়া এবং দূর্বল ফিল্ডিং ও ক্যাচ এবং রানআউটের হাফ চান্সকে ফুল চান্সে পরিণত করতে না পারার কারণেই অসিরা ৩৮০’র ঘরে পৌছে গেছে।

মাশরাফি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার এ দলের বিপক্ষে শুরুতেই উইকেট নিতে হতো, যা আমরা পারিনি। ফলে হাতে উইকেট থাকায় তারা শেষ দিকে অনেক আরামেই খেলতে পেরেছে। যে কারণে ৩৫ ওভারের পর ওরা ইচ্ছেমত চার্জ করতে পেরেছে। শেষ ১০ ওভারের ১৩১ রানই টার্নিং পয়েন্ট। ওটাই ম্যাচের গতিবিধি ঠিক করে দিয়েছে। আমরা যদি প্রথম কিংবা শেষদিকেও উইকেট ফেলতে পারতাম, তাহলে এতো রান উঠতো না।’

এআরবি/এসএএস