দেশজুড়ে

আদালতে দাঁড়িয়ে ‘স্ত্রী’ বললেন তিনি আমার স্বামী নন

একটি যৌতুক মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় এবার বিনাঅপরাধে কিশোরগঞ্জে কারাগারে প্রায় দুই মাস হাজতবাস করতে হলো লোকমান হোসেন নামের ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার এক নির্মাণ শ্রমিককে।

Advertisement

যাচাই-বাছাই না করে তাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করায় লোকমানকে হোসেনকে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ। অবশেষে মামলার বাদী আদালতে হাজির হয়ে বলেন গ্রেফতারকৃত লোকমান আমার স্বামী নন। প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এরপর মুক্তি হয় হতভাগ্য ওই যুবকের। পুলিশের এমন ভুল পদক্ষেপে বিস্মিত কিশোরগঞ্জের বিচারিক কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মীরা। যৌতুক মামলার প্রকৃত আসামি মদিনার স্বামী লোকমানকে অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

২০১২ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের রশিদাবাদ সঘড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে মদিনা বেগম রুপসার বিয়ে হয় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দক্ষিণজয়পর টবগী গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে মো. লোকমানের সঙ্গে।

Advertisement

বিয়ের দুই বছর যেতে না যেতেই মদিনার স্বামী দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরই মধ্যে মদিনার গর্ভে জন্ম নেয় একটি মেয়েসন্তান। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করেন মদিনা।

স্ত্রীর করা যৌতুকের মামলায় ২০১৭ সালের ২০ জুন মো. লোকমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন কিশোরগঞ্জের ১নং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইকবাল মাহমুদ।

এদিকে, সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার না করে এ বছরের ১০ মার্চ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দক্ষিণজয়পুর টবগী গ্রামের মোফাজ্জলের ছেলে নির্মাণশ্রমিক লোকমান হোসেনকে গ্রেফতার করে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠায় বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ।

কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করে গত ১৯ মে জামিনে মুক্তি পান লোকমান। এরপর আদালতে হাজির হয়ে প্রকৃত ঘটনা জানালে বিস্মিত হন আদালত। তলব করা হয় মামলার বাদীকে। অবশেষে বৃহস্পতিবার অভিযোগ থেকে লোকমানকে অব্যাহতি দেন আদালত।

Advertisement

লোকমান হোসেন বলেন, জামিনে বের হয়ে আমি বিষয়টি আদালতকে অবহিত করি। আদালত যাছাই-বাছাই করে আমাকে অব্যাহতি দেন। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চাই।

মামলার বাদী মদিনা বেগম রুপসা বলেন, আদালত আমাকে তলব করলে আজ আদালতে গিয়ে দেখি যাকে ধরে আনা হয়েছে তিনি আমার স্বামী নয়। আমি যার সঙ্গে দুই বছর ঘর-সংসার করেছি। আমার একটি সন্তান আছে। কাজেই স্বামীকে না চেনার কোনো কারণ নেই।

প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার না করে নিরপরাধ নির্মাণশ্রমিককে গ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এটিকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন তারা।

আসামি পক্ষের আইনজীবী আতিকুল ইসলাম খান রুবেল বলেন, প্রকৃত আসামিকে আড়াল করার জন্যই পুলিশ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা আইনের আশ্রয় নেব।

মদিনার মামলার আইনজীবী ও কিশোরগঞ্জ জেলা মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদের সহ-সভাপতি হামিদা বেগম বলেন, এটা পুলিশের চরম দুর্নীতি। নামে মিল থাকলেই যাছাই-বাছাই না করে কাউকে ধরে আসামি বানানো কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, এতে করে সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

নূর মোহাম্মদ/এএম/এমকেএইচ