কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারের চিকিৎসকদের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন মোছা. তানিয়া (১৯) নামে এক রোগী। এ ঘটনায় গত ১৬ জুন রোববার তানিয়ার বাবা মো. আক্কাছ মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
Advertisement
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ মে তানিয়ার পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে নেয়ার পর হাসপাতালের মালিক ডা. কে এন এম জাহাঙ্গীর এবং ডা. হাফিজা খাতুন তানিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করান। দুইদিন হাসপাতালে রেখে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা জানান তানিয়ার পিত্তথলিতে পাথর ও গর্ভে ৪ মাসের সন্তান আছে। এ রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যান তারা। কিছুটা সুস্থ্য হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তানিয়াকে বাড়ি নিয়ে যায় তার পরিবার। এরপর গত ২০ মে পুনরায় পেটে ব্যথা শুরু হলে তানিয়াকে আবার ওই হাসপাতারে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, তানিয়ার কিডনি ফুলে গেছে। এ কারণে আবার চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় তানিয়ার শরীরের অবস্থার অবনতি দেখা দেয়। চিকিৎসকদের পরীক্ষার রিপোর্টে অনুযায়ী দুই রম তথ্য থাকায় তানিয়ার পরিবারের সন্দেহ হয়। পরে তারা চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়াই ওই হাসপাতাল থেকে তানিয়াকে নিয়ে গত ২১ মে ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে ভর্তি করে।
ভাগলপুর হাসপাতলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়, তানিয়ার পিত্তথলিতে কোনো পাথর নেই। এমনকি কিডনিও ফুলে যায়নি। ভৈরব মেডিল্যাব হাসপাতালের চিকিৎসকরা ভুল রিপোর্ট দিয়ে ভুল চিকিৎসা করেছেন। মূলত তানিয়ার এপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেছে। যে কারণে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, রোগী বাঁচান না হয় সন্তান বাঁচান। চিকিৎসাকালে তানিয়ার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। পরে তানিয়ার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেয়ার পর তানিয়ার এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করা হয়।
Advertisement
হাসপাতালে দুইদিন রাখার পর ইনফেকশন হলে তানিয়ার পুনরায় অপারেশন করা হয়। এতেও রোগী সঙ্কামুক্ত না হওয়ায় তাকে আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে আইসিইউতে কোনো সিট খালি না থাকায় তাকে ঢাকার সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তানিয়াকে ৯ দিন আইসিইউতে রাখার পর বর্তমানে সিটে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
পরিবারের দাবি- এ পর্যন্ত তানিয়ার চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ টাকা এবং প্রতিদিন হাসপাতাল খরচ চালাতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। ভৈরব মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াবেটিক সেন্টারের মালিক ডা. কে এন এম জাহাঙ্গীর ও ডাক্তার হাফিজা খাতুনের অবহেলা ও ভুল রিপোর্ট দিয়ে ভুল চিকিৎসার কারণে আজ তানিয়াকে মারাত্মকভাবে খেসারত দিতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও মানুষিকভাবে খেসারত দিতে হচ্ছে তানিয়ার পরিবারকেও। তারা ওই চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান ।
এ ব্যাপারে ডা. কে এন এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তানিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তানিয়ার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ভাগলপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়। চিকিৎসায় আমাদের কোনো গাফিলতি বা ভুল ছিল না।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান তানিয়ার বাবার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
আসাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর/জেআইএম