চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মাদকাসক্ত মুরাদ হোসেন (৩৫) নিজেই গিয়েছেন থানায়। সেখানে গিয়ে তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি মৃত্যুর মুখে, আমাকে বাঁচান। আমাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠান।’
Advertisement
মুরাদ জানান, তিনি উপজেলার আষ্টা গ্রামের মৃত আব্বাছ মোল্লার ছেলে। বেশিদূর লেখাপড়া করা হয়নি তার। এক ধরনের ভবঘুরে জীবন যাপন করছিলেন। পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলায় তাদের একটি ব্রিক ফিল্ড রয়েছে। সেখান থেকে তার হাতে প্রচুর টাকা আসতো। যখন যা মন চায়, সেভাবেই জীবন যাপন করতে থাকেন তিনি। এভাবেই এক সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি মাদকাসক্ত। প্রথমে গাঁজা সেবন করতেন। পরে ধরেন ইয়াবা। এতে ধীরে ধীরে তার জীবনীশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। পরিবারের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন সময় অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু তিনি মাদকের জগত থেকে ফিরে আসেননি।
মুরাদ হোসেন জানান, এক পর্যায়ে তিনি বিয়ে করার চেষ্টা করেন। একে একে ২০টি পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তার মাদকাসক্তির কথা শুনে কেউই তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হননি। এমনকি মাদকাসক্তির কথা শুনে কোনো পাত্রীও তাকে বিয়ে করতে চাননি। এক পর্যায়ে তিনি একটি মেয়েকে বিয়ে করতে সক্ষম হন। দুই বছর আগে পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের সংসারে এক বছরের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমি এখনও মাদকাসক্ত। কোনো অবস্থায়ই সেখান থেকে ফিরতে পারছি না। দিনে দিনে আমার জীবনীশক্তি ফুরিয়ে আসছে। আমি আমার স্ত্রীকে সময় দিতে পারছি না। আমি কোনো প্রকার কাজ-কর্ম করতে পারি না। আমার জীবনের চাকা যেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
Advertisement
তার কথা শুনে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রকিব কুমিল্লা পুনঃজীবন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। পরে বিকেল ৫টার দিকে সেখান থেকে প্রতিনিধি এসে যাবতীয় অফিসায়াল কাজ শেষে একটি প্রাইভেটকারযোগে মুরাদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেন।
এসময় মুরাদ হোসেনের বড় ভাই আকবর হোসেন (৪০) এবং ছোট ভাই রুবেল হোসেন (২৮) ও শাকিল হোসেন (২২) থানায় উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ওসি আব্দুর রকিব জানান, যিনি মাদকাসক্ত তিনি নিজেই এর দ্বারা মারাত্মক ক্ষতির শিকার। শুধু তাই নয়, তার জন্য পরিবারের সদস্য ও সমাজ সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই মাদকের বিরুদ্ধে জনগণের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় এর ভয়াবহ ছোবলে গোটা সমাজ ব্যবস্থা ধবংস হয়ে যেতে পারে।
ইকরাম চৌধুরী/এমবিআর/এমকেএইচ
Advertisement