দেশজুড়ে

যে জেলা নিয়ন্ত্রণ করছেন ৬ নারী

পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি চির মহান, চির কল্যাণকর, অর্ধেক গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। সমাজ সংসারে নারীর অবদানকে তুলে ধরার জন্য কবি নজরুল ইসলামের এই বাণী যেন অলংকৃত হয়ে উঠেছে নরসিংদী জেলার প্রশাসনের শীর্ষ পদে ৬ নারীর পদায়নে। যা সারা বাংলাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এ জেলায় রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার, প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও পুলিশ বিভাগে একসঙ্গে নারীর ক্ষমতায়ন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় এনজিও সংগঠন বা সুধিজনদের নানা ভাবনা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আর এর শত ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে নরসিংদী জেলায়। এ জেলায় বর্তমানে বিচার বিভাগ, জন প্রাশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনসহ জেলার সর্বময় ৬টি সরকারি দফতরের প্রধান হিসেবে এখন দ্বায়িত্ব পালন করছেন ছয় নারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পদটিই জেলার শীর্ষ পদ। তারা বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও আইনশৃংখলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।দেশের সবকয়টি জেলার মধ্যে নরসিংদীই একমাত্র জেলা। যেখানে একই সঙ্গে ৬ জন নারী সরকারি প্রশাসনের ৬টি শীর্ষ স্থানে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ঘটনাটি সত্যিই বিরল বলে দাবি করেছেন সুধীজন ও প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা । মূলত তারাই এখন জেলায় সকল কর্মকাণ্ডে সিদ্ধান্ত প্রদান করে থাকেন। জেলা প্রশাসকের চলতি দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুরাইয়া বেগম। এখানে জেলা ও দায়রা জজ, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, মুখ্য বিচারিক হাকিম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ জেলার ৬টি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী কর্মকর্তারা।নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান ১০ দিনের প্রশিক্ষণে ভারতে যান। জেলা প্রশাসকের চলতি দায়িত্ব দিয়ে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুরাইয়া বেগমকে। গত রোববার থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুরাইয়া বেগম (উপসচিব) জেলা প্রশাসকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তাই নরসিংদী জেলার প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে নারী নেতৃত্বের এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে।গত ২৬ এপ্রিল নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে যোগদান করেন বেগম ফাতেমা নজীব। যিনি নরসিংদীর প্রথম মহিলা ও জেলা দায়রা জজ। এ ছাড়া গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন শামীম আহাম্মদ এবং গত ৩১ আগস্ট থেকে মুখ্য বিচারিক হাকিমের দায়িত্বে আছেন শামীমা আফরোজ।গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে নরসিংদীর প্রথম মহিলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন আমেনা বেগম (বি.পি.এম)। এর আগে তিনি রাঙামাটির পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন।জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ পদ সিভিল সার্জন। গত বছরের ২৮ মে থেকে এ পদে আছেন চিকিৎসক পুতুল রায়। নরসিংদীতে এসে সফলতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন নার্গিস সাজেদা সুলতানা।জেলা মহিলা পরিষদের সাভানেত্রী আশালতা সাহা নারীর ক্ষমতায়নে বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বলেন, নরসিংদীর প্রধান ৬টি সরকারি দফতরে একই সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ঘটনাটি একটি যুগান্তকারী  মাইল ফলক। নারীরা তাদের মেধা দিয়ে আজকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছে। নরসিংদী জেলার এই ঘটনা পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নারীরা ইতোমধ্যে সকল ক্ষেত্রেই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ভবিষ্যতেও নারীরা সমাজ ও দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, এতদিন ধরে সচেতন মানুষের যে স্বপ্ন ছিল এখন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। নারী এবং পুরুষ বলে আলাদা কোনো ব্যাপার নেই। আমরা সবাই রাষ্ট্রের কর্মকর্তা হিসেবে যার যার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। নরসিংদী জেলার এক সঙ্গে ৬টি শীর্ষ পদে নারীদের দায়িত্ব পালন নারীর ক্ষমতায়নের একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। এত অন্য নারীরাও অনুপ্রাণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।জেলা প্রশাসকের চলতি দায়িত্বে থাকা সুরাইয়া বেগম বলেন, নারীদের প্রশাসনের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন সর্বস্তরের নারীদের আত্মবিশ্বাসী ও আত্মমর্যাদাশীল করে তুলবে। পাশাপাশি নারীরা নিরাপত্তা বিষয়ে আরও আত্মপ্রত্যয়ী হবে।সঞ্জিত সাহা/এমএএস/পিআর

Advertisement