আন্তর্জাতিক

মুরসির মৃত্যুতে জাতিসংঘের তদন্ত দাবি

মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সোমবার আদালতে মারা যান। তার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং এইচআরডাব্লিউ।

Advertisement

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডাব্লিউ বলছে, ‘বছরের পর বছর কারাগারে মুরসিকে অনেকটা সময় নিঃসঙ্গ রাখা, পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে না দেয়া, অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা ইত্যাদির কারণে মুরসির মৃত্যু হয়েছে।’

সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পরিচালক সারাহ লেয়াহ হুইটসন বলেন, মুরসির সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের আচরণ ‘ভয়ংকর’ ছিল। মুরসির মৃত্যু জন্য দায়ীদের তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও মুরসির মৃত্যুর তদন্ত করতে মিসর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷

.@HRW#Egypt government deliberately singled out former Pres #Morsy for especially harsh treatment & isolation. Whatever one’s views of Morsy’s politics, his treatment was horrific & those responsible should be investigated & appropriately prosecuted https://t.co/crb1oqHBTZ

Advertisement

— Sarah Leah Whitson (@sarahleah1) June 18, 2019

২০১১ সালে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামি গোষ্ঠী মুসলিম ব্রাদারহুড সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সরকার সন্ত্রসী সংগঠন ঘোষণা করায় দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন>> গোপনেই মুরসির দাফন সম্পন্ন

এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন মুরসি। তবে তার শাসনামলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা ও দেশকে ইসলামিকরণ করার অভিযোগ এনেছিলেন সমালোচকেরা। এই অবস্থায় মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে ২০১৩ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে গ্রেফতার করে সামরিক বাহিনী।গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বিচার চলছিল মুরসির। সোমবার আদালতে নিজের বক্তব্য রাখার পর অসুস্থ বোধ করে সেখানেই মারা যান বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। অপ্রকাশিত মেডিকেল সূত্রের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, মুরসি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

মঙ্গলবার সকালে মুরসিকে কায়রোর এক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার এক আইনজীবী। মুরসির ছেলে আহমেদ জানিয়েছেন, মুরসিকে তার জন্মভূমি শারকিয়া রাজ্যে দাফন করতে চেয়েছিলেন তারা ৷ কিন্তু নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অনুমতি না দেয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন>> আদালতেই মারা গেলেন মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসি

মুরসির দাফনের সময় সংবাদকর্মীদেরও সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি৷ এমনকি মুরসির জন্মভূমিতেও সাংবাদিকদের যেতে দেয়া হয়নি। তাকে কায়রোর নাসার শহরে দাফন করা হয়েছে। সে সময় তার পরিবারের কিছু সদস্য ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান মুরসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তাকে ‘শহীদ’ ও ‘ভাই’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল-ফাতাহ-আল-সিসিকে ‘নিষ্ঠুর’ বলেছেন।

মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা মোহামেদ সুদান দাবি করেছেন, মুরসি ‘পরিকল্পিত হত্যার’ শিকার। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিচ মুরসির আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিও মুরসির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন। আরও শোক জানিয়েছে ইরান, মালয়েশিয়া, হামাস এবং পাকিস্তানের জামাত-ই-ইসলামী দল। বাংলাদেশের জামায়েত ইসলামী দলও মুরসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

এসএ/এমএস