আইন-আদালত

আড়ংয়ে অভিযান চালানো কর্মকর্তাকে বদলির ঘটনা লজ্জার : হাইকোর্ট

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, আড়ংয়ে অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের কর্মকর্তাকে রাতের আঁধারে বন্ধের দিন যেভাবে বদলি করা হয়েছে, সেটা লজ্জার। যারা বদলি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ ছিল। এ ধরনের বদলির ফলে যারা সৎ অফিসার তারা কাজ করতে নিরুৎসাহিত হয়।

Advertisement

আদালত বলেন, বন্ধের মধ্যে বদলির এই আদেশ স্থগিতে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। যদি সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তাহলে সচিবরা কেন আছেন? তারা কি ওদের পকেটে ঢুকে গেছেন?

দেশজুড়ে ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার বা ধ্বংস করতে দায়ের করা রিটের শুনানিতে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন> মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে ল্যাবএইড

Advertisement

এরপর দেশব্যাপী মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার/ধংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছেন। রুলে ফার্মেসি বা ওষুধাগারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও সংরক্ষণ বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও উপ পরিচালক,পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।

আরও পড়ুন> আড়ংয়ের অভিযানের সঙ্গে বদলির কোনো সম্পর্ক ছিল না : জনপ্রশাসন সচিব

গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।

Advertisement

এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে (১৭ জুন) জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে রিট করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।

আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুন এক ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে আড়ংয়ের উত্তরা শাখায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামে ওই ক্রেতার অভিযোগ, গত ২৫ মে তিনি আড়ংয়ের উত্তরা শাখা থেকে ৭১৩ টাকায় একটি পাঞ্জাবি কিনেছিলেন। ছয় দিন পর ৩১ মে ওই একই পাঞ্জাবি কিনতে গিয়ে দেখেন, সেটির দাম ১৩০৫ টাকা। বেশি দামেই পাঞ্জাবিটি কিনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন তিনি। তার অভিযোগের ভিত্তিতে আড়ংয়ে অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করেন।

এ ঘটনার পর মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে বদলির আদেশ দিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয়ার আদেশ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে আবার তার বদলির এ আদেশ বাতিল করা হয়।

এফএইচ/এমএসএইচ/পিআর