কুনজর বা কুদৃষ্টি মানুষকে অন্যায় কাজের দিকে ধাবিত করে। এর মাধ্যমেই মানুষ অপরাধের দিকে ধাবিত হয়। অশ্লীলতা ও নগ্নতার প্রভাব বেড়ে যায়। এ কারণেই ইসলাম মানুষকে দৃষ্টির হেফাজতের ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন।
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন মুসলমানকে রাস্তার হক আদায় করে চলাফেরা করার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। দৃষ্টিকে অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বদ নজরের কারণে মানুষের অন্তর ও চরিত্র বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়। যা মানুষকে ধীরে ধীরে চরিত্রহীনতার দিকে ধাবিত করে। আর তাহলো-
>> কল্পনাকুদৃষ্টি মানুষকে কল্পনাবিলাসী করে তোলে। দৃষ্টি হেফাজত না করে যদি কোনো সুন্দর চেহারার প্রতি নজর যায়। তবে সে চেহারা নিয়ে মানুষের মনে তৈরি হয় কল্পনা। কল্পনার রাজ্যে মানুষ এমন কোনো হীন অপরাধ বা চিন্তা নাই, যা সে করে না। ফলে কাল্পনিকভাবেই মানুষের মাঝে তৈরি হয় চরম ও জঘন্য গোনাহের কাজ।
Advertisement
বদ নজরকে বাহন বানিয়ে শয়তান মানুষের মন-মস্তিষ্কে হানা দেয়। একটা সময় মানুষ কল্পনাপ্রসূত চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নে আগ্রাসী হয়ে ওঠে। এ বদ নজর মানুষকে বিধ্বংসী খারাপ চরিত্র থেকে শুরু করে শিরকের দিকে ধাবিত করে।
দৃষ্টি বা নজর ভালো করতে আল্লাহর ভয় অর্জন করতে হবে। আল্লাহর ভয়ে ভীত লোকদের সংস্পর্শে থাকতে হবে। বিশেষ করে খারাপ মানুষের সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সর্তক করেছেন এভাবে-
‘আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার চিত্তকে (মনকে) আমি আমার স্মরণ থেকে অমনোযোগী করে দিয়েছি। যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।’ (সুরা কাহ্ফ : আয়াত ২৮)
>> মস্কিষ্কের বিকৃতিবদ নজরের ফলে মানুষ যে কোনো ভালো কাজ বা কথা থেকে দূরে সরে যায়। মানুষের ভালো কথা পছন্দ হয় না। কুরআন-সুন্নাহর পরিবর্তে গান-বাদ্য-বাজনায় আসক্ত হয়ে পড়ে।নিজ ঘরে সুন্দরী সতী-সাধবি স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও মানুষ পরনারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। পশুর চরিত্র ধারণ করে বসে। যা মানুষকে চারিত্রিক অবক্ষয়ের শেষ প্রান্তে নিয়ে যায়।নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পড়া-লেখা ছেড়ে দিয়ে সারাক্ষণ মোবাইলসহ ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ও চরিত্র বিধ্বংসী খেলাধুলা ও সিনেমায় আসক্ত হয়ে যায়। দুনিয়ার সব খারাপ তথ্য উপাত্তগুলোকেই জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া মনে করে।
Advertisement
শিশু, কিশোর, যুবক, ছাত্র, ব্যবসা, চাকরিসহ প্রতিটি কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি নিজ নিজ কাজে এমনভাবে অমনোযোগী হয়ে ওঠে যে, এর বিপরীত খারাপ কাজ ছাড়া কোনো কাজেই তার মন বসে না।
এ থেকে বেঁচে থাকেত আল্লাহর সাহায্য লাভে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশিত এ দোয়া বেশি বেশি পড়া জরুরি-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)
>> ধর্মীয় ঘোড়ামিবদ নজরের ফলে মানুষ তাওহিদ থেকে শিরকে দিকে ধাবিত হয় আবার ইবাদতকারী ব্যক্তি বেদায়াতের দিকে ধাবিত। কুরআন-সুন্নাহর বিভিন্ন বিষয় পড়তে কিংবা অধ্যয়ন করতে গিয়ে বিপরীত চিন্তা-ভাবনায় নিজেকে জড়িয়ে রাখে।
স্বচ্ছ ইসলামে বিশ্বাসী মুমিন ব্যক্তির প্রতি ধর্মীয় গোড়ামির কুপ্রভাবে নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ঈমান বিধ্বংস হয়ে যায়। তাওহিদের বিপরীতে শিরকে জড়িয়ে পড়ে। ইবাদত মনে করে বেদায়াতি কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে। ফলে মানুষ ঈমানহারা হয়ে যায়।
সুতরাং মানুষের উচিত, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা। এমন কোনো দিকে নজর বা দৃষ্টি না দেয়া যার ফলে মানুষ কুদৃষ্টি বা বদনজরের রাহুগ্রাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
বদনজর বা কুদৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে বাঁচতে নিয়মিত কুরআনি আমল করে যাওয়া। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। এ আয়াত তেলাওয়াত করা। এ আয়াতের শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। যারা পড়তে পারে না তা লিখে নিজেদের সঙ্গে রাখা-
وَإِن يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ - وَمَا هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ
উচ্চারণ : ওয়া ইয়্যাকাদুল্লাজিনা কাফারু লাইয়ুযলাকুনাকা বি-আবসারিহিম লাম্মা সামিয়ুজ জিকরা ওয়া ইয়াকুলুনা ইন্নাহু লামাঝনুন। ওয়া মা হুয়া ইল্লা জিকরুল লিল-আলামিন।’ (সুরা আল-ক্বালাম : আয়াত ৫১-৫২)
অর্থ : ‘অবিশ্বাসীরা যখন আল্লাহর কিতাব শুনে তখন এমনভাবে তাকায় যে, মনে হয় এখনই নিজেদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ঘায়েল করে দেবে। তারা এ কথাও বলে যে, সে (এ কিতাবের বাহক) একজন পাগল। অথচ (এরা জানে না) এ কিতাব তো মানবমণ্ডলীর জন্যে একটি উপদেশ বৈ কিছুই নয়!’
মনে রাখতে হবেকুনজরের বড় ক্ষতিগুলো থেকে বাঁচতে কল্পনা, মস্তিষ্কের বিকৃতি ও ধর্মীয় গোড়ামি থেকে বেঁছে থাকা যেমন জরুরি তেমনি বেশি বেশি আল্লাহকে ভয় করাও জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দৃষ্টির হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। খারাপ বা অশ্লীল কাজ ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। জীবনের যাবতীয় খারাপ ধারনা ও কুনজর থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর সাহায্য ও প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ