খেলাধুলা

এমন অসাধারণ জয়ই এখন বাংলাদেশের পক্ষে বেশি মানায়

ক্রিকেটের মহারাজা ছিল তারা। ছিল বাদশা, সম্রাট, ক্রিকেটের রাজাধিরাজ। তাদের সামনে মাথা নোয়াতে হতো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোকেও। সেই রাজাধিরাজদের মাথায় আজ মুকুট নেই। তারা সাম্রাজ্য হারা। কিন্তু কথায় বলে, হাতি মরলেও নাকি লাখ টাকা। কিন্তু হাতি সমতুল্য এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল্য এখন একেবারেই নস্যি।

Advertisement

অন্তত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন নস্যি’ই। এই দলটিকে বাংলাদেশ এখন বলে-কয়ে হারাতে পারে। আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে তিনবার হারিয়েছে ক্যারিবীয়দের। ফাইনালে তো বলতে গেলে অসম্ভব এক জয়কে সম্ভব করে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

তারও আগে, চলতি বছরের শুরুর দিতে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-১ ব্যবধানে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে তাদেরকেই ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে এসেছে।

নিন্দুকেরা বলছিলেন, আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন না গেইল, রাসেল, ওশানে থমাসদের মতো মূল দলের ৬ জন ক্রিকেটার। কিন্তু টনটনের সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তো পুরো দলই ছিল। ছিলেন গেইল, বিধ্বংসী অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। পেসার কটরেল, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল এবং গতিময় তরুণ পেসার ওশানে থমাস।

Advertisement

কিন্তু কী এক রাজকীয় জয়ে ক্যারিবীয় রাজের মুকুটটাই যেন নিজেদের মাথায় পরে নিলো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটের বাদশা, সম্রাট কিংবা রাজাধিরাজ বাংলাদেশ হতে না পারুক, ক্রিকেট বিশ্বকে তো আবারও বাঘের গর্জন শুনিয়ে দিতে পারলো!

বাঘের গর্জন বাংলাদেশ এখন নিয়মিতই শোনায় ক্রিকেটবিশ্বকে। বড় বড় দলকে হারানো এখন অনেকটা অভ্যাসেই পরিণত হয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে সত্যি সত্যি বাংলাদেশ অনেক বড় দলে পরিণত হয়েছে। মিনোজ তালিকা থেকে মুচে দিয়ে নাম লিখে ফেলেছে বড়দের কাতারে।

এবারের বিশ্বকাপেই যার প্রমাণ। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ৩৩১ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করিয়ে দিয়ে ২১ রানের দারুণ এক জয়। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের হিসাবের ভুলে শেষ মুহূর্তে হেরে গেলেও ক্রিকেট বিশ্বকে জানিয়ে দিতে পেরেছে, ‘আমরা লড়াই করার মতো দলে পরিণত হয়ে গেছি। যেনতেনভাবে এখন আর হারানো যায় না আমাদেরকে।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুমিতভাবেই হারতে হয়েছিল। তাদের করা ৩৮৬ রানের বিশাল স্কোরের পর জয়ের কল্পনাও করা ছিল বোকামি। তবুও সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে হয়তো আরও একটি গৌরবগাঁথা লিখা হয়ে যেতো বাংলাদেশের নামের পাশে।

Advertisement

সে যাই হোক, টনটনের সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাউন্ডারি ছোট। অহরহ ছক্কা হয়। ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানবরা তো ছক্কার নহর বইয়ে দেবেন- এমন উক্তি শোনা গিয়েছিল বেশ। ক্রিস গেইল, সাই হোপ, নিকোলাস পুরান, আন্দ্রে রাসেল, এভিন লুইস কিংবা শিমরন হেটামায়াররা তো ছক্কাবৃষ্টি শুরু করে দেবেন।

কিন্তু টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর ক্রিস গেইল ডাক মারলেন। আন্দ্রে রাসেল ব্যাট করতে নামার পর ডাক মারলেন। সবচেয়ে বিধ্বংসী দুই ব্যাটসম্যানই দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়। বাংলাদেশের বোলারদের বিরুদ্ধে যা একটু লড়াই করলেন সাই হোপ। এরপর কিছুক্ষণ লড়াই করেন শিমরণ হেটমায়ার।

এই ক্যারিবীয়রা বিশ্বকাপের শুরুতেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে পাকিস্তানকে মাত্র ১০৫ রানে অলআউট করে দিয়ে। সেই দলটি বাংলাদেশের সামনে দাঁড় করালো ৩২২ রানের বিশাল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নামার আগেই পিলে চমকে যাওয়ার কথা।

কিন্তু এটা এখন বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। এই দলটি আর ঘাবড়ে যায় না। কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যাবেন। লড়াই করবেন। দলকে জেতানোর চেষ্টা করবেন। সাকিব আল হাসানের কথা আলাদা বলতেই হয়। বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে দিয়েছেন সাকিব। অসাধারণ পারফরমার। তার ব্যাটিং-বোলিংয়ের সামনে উড়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ দলগুলো। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সাক্ষাৎ প্রতিমুর্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করাই তার বড় প্রমাণ।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গেছে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন এখনও দারুণভাবে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে টাইগাররা। দুই ম্যাচে জয়, এক ম্যাচে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চলে এসেছে ৫ নম্বরে। সামনে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের বিপক্ষে অবশ্যই জয় চাই।

এরপর অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারতের যেকোনো একটিকে বধ করতে হবে। তবেই হয়তো স্বপ্নপূরণ হয়ে যাবে বাংলাদেশের। এছাড়া বৃষ্টি কোনো না কোনোভাবে হিসাব-কিতাব পাল্টে দিতে পারে। তাহলে তো কথাই নেই। তবে বাংলাদেশ খেলেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার যোগ্যতা রাখে। সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজকের ম্যাচেই প্রমাণ করে দিয়েছেন সাকিব আল হাসানরা।

আইএইচএস/বিএ