দেশজুড়ে

কথা রাখেননি সেতুমন্ত্রী

দীর্ঘ সাত বছরেও হয়নি সড়কের সংস্কার। উঠে গেছে সড়কের কার্পেটিং। পিচ ও ইট উঠে সড়কে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কর্দমাক্ত হয়ে গেছে পুরো সড়ক। দেখে মনে হয় সড়ক নয় যেন ধানের খেত। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। কক্সবাজারের টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কের বর্তমান অবস্থা এটি।

Advertisement

২০১২ সালে দ্বীপের পশ্চিমের বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে সড়কের হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ উত্তরপাড়া পর্যন্ত চার কিলোমিটার বিলীন হয়ে যায়। বেড়িবাঁধ মেরামত চলমান থাকলেও স্লুইসগেট দিয়ে ঢোকা পানিতে ডুবে যায় সড়ক। ফলে নৌকাতেই চলাচল ভরসা এলাকাবাসীর। গত সাত বছরেও সড়কটির সংস্কার না হওয়ায় ভোগান্তি কাটছে না এলাকাবাসীর।

দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙনের পর থেকে শাহপরীর দ্বীপে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত জোয়ার- ভাটার বৃত্তে বন্দি হয়ে আছেন। চার কিলোমিটার সড়ক নিয়মিত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকাই একমাত্র ভরসা দ্বীপবাসীর। জোয়ারের পানি নেমে গেলে ক্ষতবিক্ষত সড়ক পায়ে মাড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ নেই।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী আফরোজা আকতার রোজা বলেন, জোয়ারের পানি স্লুইসগেট দিয়ে ঢুকলে সড়কটি প্লাবিত হয়। তখন নৌকায় চলাচল করতে হয়। ভাটায় চার কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। সাত বছর এভাবেই পার করছি আমরা।

Advertisement

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত বাণিজ্য, মৎস ও লবণ শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। মিয়ানামার থেকে গবাদিপশু আমদানির করিডোর শাহপরীর দ্বীপে অবস্থিত। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বাণিজ্যিক পণ্য অতিরিক্ত ব্যয়ে পরিবহন করতে হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হক বলেন, শুষ্ক মৌসুমে দ্বীপের একপাশের বাসিন্দারা নাফ নদের বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। বর্ষায় বেড়িবাঁধ কর্দমাক্ত হলে চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। এজন্য বাধ্য হয়ে সড়কের ভাঙা অংশ দিয়ে সৃষ্ট খালে নৌকায় এবং ভাটার সময় পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।

জানা যায়, ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোরা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই সময় তিনি শাহপরীর দ্বীপ সড়কের একাংশের বেহাল অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে সেতুমন্ত্রী বলেছিলেন, বেড়িবাঁধ হয়ে গেলে সড়ক সংস্কার করা হবে। কিন্তু গত দুই বছরেও সড়কটি সংস্কার হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন কথা রাখেননি সেতুমন্ত্রী।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, শাহপরীর দ্বীপ সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশসহ জেটিঘাট পর্যন্ত পাঁচ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ৬৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকল্প অনুমোদনের দীর্ঘ এক বছর পার হলেও কাজ শুরু হয়নি। কবে নাগাদ সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে তাও অনিশ্চিত।

Advertisement

কক্সবাজার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, শাহপরীর দ্বীপের পাঁচ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। চলতি বছর কাজ শুরুর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে শুরু হয়নি। চলতি মাসেই প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করছি বর্ষার পর সড়কের কাজ শুরু হবে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শাহপরীর দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণাধীন। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। এখন সড়ক সংস্কারে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।

সায়ীদ আলমগীর/এএম/জেআইএম