যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাজ্য এসেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজা দল, যে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নে গোটা দেশ ও জাতি অধীর- সে স্বপ্ন কি পূরণ হবে? টাইগাররা কি সেরা চারে জায়গা করে নিতে পারবে? অতিবড় বাংলাদেশ সমর্থকের মনেও এখন খানিক সংশয়, দ্বিধা।
Advertisement
তার কারণ সহজ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন আর টাইগারদের অবস্থান তত সমৃদ্ধ নেই। পথচলাও তেমন মসৃণ নয়। পরপর নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের কাছে হার এবং সব শেষে ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার সাথে বৃষ্টিতে ম্যাচ পন্ড হয়ে এক পয়েন্ট খুইয়ে বসা।
সে কারণেই পয়েন্ট টেবিলে এখন আর টাইগারদের অবস্থান ওপরের দিকে নেই। এ মুহূর্তে অবস্থান আট নম্বরে। ১০ দলের চার দল খেলবে সেমিফাইনালে। সেখানে বাংলাদেশ এখন আট নম্বরে! এত নিচ থেকে চারের ভিতরে জায়গা করে নেয়া কি সম্ভব হবে?
এমন যারা ভাবছেন, তাদের জন্য বলা- এটা সত্য বাংলাদেশের সেরা চারে জায়গা করে নেয়া সত্যিই কঠিন। অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে আরও বড় দলকে হারিয়েই অত দূর যেতে হবে । তাই বলে কিন্তু সুযোগ ও সম্ভাবনা কমে একদম শেষ হয়ে যায়নি।
Advertisement
গাণিতিক সমীকরণ আছে এখনও, থাকবেও। যারা ভাবছেন কাল (সোমবার) ১৭ জুন টনটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারলেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাবে, তারাও ভুল ভাবছেন। হিসেব নিকেশ তখনও বাকি থাকবে। এরপরও সম্ভাবনা থাকবে।
তবুও কাল টনটনের সমারসেট কাউন্টি ক্লাব মাঠে বাংলাদেশের অগ্নিপরীক্ষা। কাকাতালীয়ভাবে যে দলের বিপক্ষে অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নামবে, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও কিন্তু একই অবস্থা। দু’দল এখন সমান্তরালে।
বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলে টাইগার আর ক্যারিবীয়রা সমানসমানে। দুদলেরই পয়েন্ট তিন। একটি করে জয় আছে। আর সমান দুটি ম্যাচে হার। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত। এরকম অবস্থায় দু’পক্ষেরই কি এটা ডু অর ডাই বা বাঁচামরার লড়াই? টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি ঠিক সেভাবে দেখতে নারাজ।
পরিবেশ-পরিস্থিতি সব তার জানা,বোঝা। কি হলে কি হবে, তা ঠিক ভালই বোঝেন টাইগার ক্যাপ্টেন। আর বোঝেন বলেই কালকের ম্যাচে নিজ দলকে যতটা সম্ভব চাপমুক্ত রাখার চেষ্টায় মাশরাফি। এ ম্যাচের গুরুত্ব কী? জিতলে কী হবে আর হেরে গেলে অবস্থান গিয়ে কোথায় দাঁড়াবে, তা মাশরাফির অনুভব-উপলব্ধিতে আছে ঠিক। তিনি খুব ভাল জানেন, কী হলে কী হবে?
Advertisement
তাই এক ইংলিশ সাংবাদিক যখন জানতে চাইলেন, দু’দলের অবস্থান, পয়েন্ট সব সমান। এটা কি তাহলে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই? মাশরাফি জবাব দিলেন কূটনৈতিকদের ভাষায়। জানিয়ে দিলেন, ‘হ্যাঁ! দুই দলের পয়েন্ট সমান। তবে আমি ঠিক ওভাবে দেখতে চাই না। আমি আমাদের মত করে ভাবতে চাই। আমরা এখনই সব শেষ ভেবে আগাতে চাই না। আরও পাঁচ ম্যাচ বাকি আছে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করছি। সেভাবেই আগাতে চাই।’
এটুকু শুনে আবার ভাববেন না বাংলাদেশের অধিনায়ক বুঝি আবার জয়ের চেয়ে হারের কথা ভাবছেন বেশি। পরের লাইনেই মাশরাফি বলে দিয়েছেন, ‘তবে অবশ্যই কালকের ম্যাচে জয় চাই। এ মুহূর্তে অনেক কারণেই জয় দরকার। জয়ের বিকল্প কিছু নেইও।’
আসলে মাশরাফি নিজে এবং দলকে বড়সড় চাপে ফেলতে চান না। কাল হারলে সব শেষ হয়ে যাবে- এমন ভেবে মাঠে নামার অর্থ একটা অঘোষিত নকআউট ম্যাচ। বাড়তি চাপ, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। তাতে স্বাভাবিক পারফরমেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেটা লাভের চেয়ে ক্ষতিই করবে বেশি। আর তাই মাশরাফি জিততে মরিয়া, সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে- এমন চিন্তা করতে রাজি নন।
এআরবি/এসএএস