শেষ হচ্ছে দর্শনার্থীদের অপেক্ষার প্রহর। ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগে গড়ে ওঠা সৌন্দর্যমণ্ডিত ইকো পার্কটি অল্প কিছুদিনের মধ্যে উদ্বোধন হচ্ছে। সামাজিক বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৪.৭৫ একর জমির ওপর নির্মিত পার্কটি খুলে দিলে ফেনীসহ আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য পারিবারিক বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
Advertisement
সামাজিক বন বিভাগ ফেনী সদর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা তপন কুমার দেবনাথ জানান, প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এ ইকো পার্ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের বাইরে ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ইকো পার্কের অভ্যন্তরে একটি দ্বিতল বিশ্রামাগার (রেস্ট হাউস) করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে পার্কে স্থান পেয়েছে দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চ, ছায়ার জন্য দেওয়া হয়েছে ছাতা, দেখার জন্য রয়েছে হরিণ, বানর, ময়ূর, খরগোশ, তিতির, টার্কি, বনমোরগ, টিয়া ও ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। শিশুদের খেলার জন্য শিশু কর্নার, পুকুরে নৌকা ভ্রমণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি। এটি বর্তমানে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
> আরও পড়ুন- বনলতা এক্সপ্রেসে ভ্রমণে কেমন খরচ
Advertisement
পার্কে ঢুকতেই দেখা যায়, নানা ধরনের ফুলের বাগান, হাঁটার জন্য পাকা সড়ক, পথের পাশে ও বাগানের আশেপাশে বসে গল্প করার জন্য ২০টি বেঞ্চ, বিভিন্ন পশু-পাখির অবয়বে ডাস্টবিন, পার্কের ভেতরে দর্শনার্থী শিশুদের জন্য শিশু কর্নার করা হয়েছে। সেখানে শিশুদের মেরি গো রাউন্ড (ঘূর্ণায়মান), স্লিপার, ঢেঁকি, দোলনা, ব্যাঙের ছাতাসহ আনন্দ উপভোগের নানা সুযোগ রয়েছে। এছাড়া পার্কের ভেতরেই দর্শনার্থীদের খাওয়া ও নাস্তার জন্য রয়েছে রেস্তোরাঁ।
পার্কের শেষ প্রান্তে পশু-পাখির জন্য চিড়িয়াখানার আদলে আলাদা আলাদা কর্নার করা হয়েছে। সেগুলোর একটিতে ৬টি বানর লাফালাফি করছে। আরেকটিতে ৬টি ভারতীয় ময়ূর, পাশেরটিতে ৮টি খরগোশ ছোটাছুটি করছে, একটি বড় খাঁচায় রয়েছে তিতির, টার্কি ও বনমোরগ। একটু দূরে আছে হরিণের একটি বড় বেষ্টনী। সেখানে ৪টি হরিণ রয়েছে। পাশেই বিচরণ করছে সাদা রাজহাঁস।
পার্কের মাঝখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির আদর্শ বাগান, নার্সারি সেন্টার, বিভিন্ন বনজ, ফলদ, ওষুধি, বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির সমন্বয়ে একটি মিনি বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং সুদৃশ্য ফুলের বাগান। বিশ্রামাগারের সামনেই একটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাশেই একটি পুকুর, পুকুরের চারপাশে চারটি পাকা ঘাট, মাঝখানে একটি সুন্দর ফোয়ারা, পুকুরে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রয়েছে একটি সুন্দর নৌকা। ওই নৌকায় একসঙ্গে ২০ জন ওঠা যাবে। পার্কের মাঝ বরাবর প্রায় ৫০ ফুট উঁচু একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। টাওয়ারের ওপর উঠে দর্শনার্থীরা আশেপাশের গ্রামসহ পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
> আরও পড়ুন- গরমে ঘুরে আসুন বান্দরবানের বগা লেক
Advertisement
জিয়া উদ্দিন ও সাইদুল হক নামের দুই যুবক জানান, পার্কটি দেখার জন্য ইতোমধ্যে আশেপাশের উৎসুক লোকজন অপেক্ষা করছে। অনেকেই পার্কের গেটে দাঁড়িয়ে ভেতরের দৃশ্য দেখেন। এটি চালু হলে আশপাশের মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাবে।
সামাজিক বন বিভাগ ফেনীর কর্মকর্তা এস এম কায়চার জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলেই এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পার্কে প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের বিশ টাকা, শিশু ও শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে।
কাজিরবাগ ইকো পার্ক ফেনী-পরশুরাম সড়কের পাশে অবস্থিত। ফেনী শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফেনীর মহিপাল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লার লোকজন বাসযোগে মহিপাল পৌঁছে সিএনজি, অটোরিকশা অথবা টমটমে যেতে হবে। ফেনী ট্রাংক রোড বা রেলওয়ে স্টেশন থেকেও সিএনজি, অটোরিকশা অথবা টমটমে যাওয়া যায়।
রাশেদুল হাসান/এসইউ/পিআর