জরুরি বিভাগে থাকেন না চিকিৎসক, অফিস চলাকালীন বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন তারা। এমনকি হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরবরাহ না করা ও হাসপাতালের খাবারের নিম্নমানসহ নানান অভিযোগ ও অনিয়মে ভরপুর মাদারীপুরের শবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
Advertisement
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক থাকলেও তাদের অবহেলায় ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। শিবচর উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখসহ পার্শ্ববর্তী জাজিরা ও মাদারীপুর সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজন এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক্স-রে মেশিন, ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। ফলে বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য হন রোগীরা। এমনকি বাইরের ডায়গনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার যোগদাহের মাঠ এলাকার রোগী জুলেখা বলেন, তিন ধরে এখানে ভর্তি রয়েছি। এরমধ্যে মাত্র একবার ডাক্তারের দেখা পেয়েছি।
এছাড়া বহেরাতলা গ্রামের রোগী হালিমা বলেন, পিত্তথলির রোগ নিয়ে এখানে ভর্তি আছি। ডাক্তর আসার পরই ফরিদপুর চলে যেতে বলেছেন। আমার মতো গরিব রোগী কি আর ফরিদপুর গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারে?
Advertisement
রোগীদের অভিযোগে জানা যায়, হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও তা করা হয় না। কর্তব্যরত নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যোগসাজসে রোগীদেরকে দিয়ে কৌশলে ওষুধ কেনানো হয়।
এছাড়া জরুরি বিভাগে যেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা সেখানে ব্রাদার বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরাই জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আর চিকিৎসক থাকেন বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে ও প্রাইভেট হাসপাতালে। কোনো গুরুতর রোগী এলে ফোন দিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারদের ডেকে আনেন কর্মচারীরা।
খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এম এ মোকাদ্দেসের বিরুদ্ধেও ডিউটির সময় হাসপাতালের বাইরে গিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিবচরে যতগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে প্রত্যেক হাসপাতালের একজন বা দুজন করে প্রতিনিধি ডাক্তারের চেম্বারের সামনে ঘুরাঘুরি করেন। তারা ডাক্তারদের বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়ে রোগীদের তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠাতে বলেন। অভিযোগ রয়েছে প্রত্যেক ডাক্তার তাদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালে চুক্তিবদ্ধ থাকেন।
Advertisement
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এম.এ মোকাদ্দেস বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দালালমুক্ত করার জন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন। দুই একজন ডাক্তার যে চরম অনিয়ম করেন সেটা সত্য। গত কয়েক দিন আগে আমি নিজেই অফিস চলাকালীন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে গিয়ে একজন ডাক্তারকে হাতেনাতে ধরি এবং তাকে শোকজ করি।
মাদারীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাসিরুল হক/এফএ/এমএস