ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল কি পদত্যাগ করেছেন? শনিবার (১৫ জুন) দিনভর ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ফাউন্ডেশনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুখে মুখে এমন প্রশ্ন ফিরেছে। কিন্তু পদত্যাগ করা বা না করার ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত হতে পারেননি।
Advertisement
শনিবার সকালে সরকারি ছুটির দিন হলেও সামীম মোহাম্মদ আফজাল আগারগাঁওয়ে ইসলামি ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে গেলে তিনি পদত্যাগ করছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কার্যালয়ে গেলেও পদত্যাগপত্র জমা দেননি তিনি। অফিসে কিছুক্ষণ অবস্থান করে অর্ধশতাধিক ফাইল বেঁধে নিয়ে গাড়িতে উঠতে চাইলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে পড়েন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ঘেরাও করে রাখে। ইফার সচিবের বাধার মুখে ফাইল ফেরৎ দিতে বাধ্য হন আফজাল। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে তিনি পুলিশি প্রহরায় কার্যালয় ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার রাত ১১টায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ইফা মহাপরিচালক শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ। তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। তাই শনিবার ছুটির দিনে পদত্যাগ করতে গিয়ে সরকারি অর্ধশতাধিক ফাইল অফিস থেকে সরিয়ে বাসায় নিতে চেয়েছিলেন। সরকারি ফাইল এভাবে নেয়ার অপচেষ্টা করা তার মোটেও উচিৎ হয়নি। সকালে তিনি পদত্যাগ করতে গেলেও পদত্যাগ করেননি। পরবর্তীতে দিনে কয়েকবার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সংবাদ প্রচারিত হলেও, রাত পর্যন্তও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, সম্প্রতি ইফা মহাপরিচালক গভর্নিং বডির সভা ছাড়া অনৈতিকভাবে ইফার পরিচালক মহিউদ্দিন বাদলকে সাসপেন্ড করেন। এ নিয়ে ফাউন্ডেশনে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সৌদি আরব অবস্থান করছিলেন। অনৈতিকভাবে পরিচালককে সাসপেন্ড করার ঘটনায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। দেশে গভর্নিং বডির সভা ছাড়া কেন তাকে সাসপেন্ড করা হলো, এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সামীম মোহাম্মদ আফজালকে কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করা হয়। একইসঙ্গে পরিচালককে সাসপেন্ড করার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
Advertisement
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও ইফা মহাপরিচালকের মনোমালিন্যের খবরটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত গড়ায়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও ইফা মহাপরিচালকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন।
দুজনের কাছ থেকে কথা শোনার পর ওই শীর্ষ কর্মকর্তা ইফা মহাপরিচালকের ক্যান্সারের বিষয়টি আমলে নিয়ে তাকে বলেন, আপনি ১০ বছর ইফা মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন আপনি অসুস্থ। আপনি বরং পদত্যাগ করেন। এ কথার পর সামীম মোহাম্মদ আফজাল শনিবার পদত্যাগ করবেন বলে বিদায় নেন।
ইফা কার্যালয়ে শনিবার যা ঘটেছে
সূত্র আরও জানায়, শনিবার সকালে ডিজি পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে ইফার সচিব কাজী নূরুল ইসলামকে অফিসে ডেকে পাঠান। খবর পেয়ে বন্ধের দিনেও অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী আগারগাঁও ইফার কার্যালয়ে ভিড় করেন। এরই মধ্যে ডিজির আস্থাভাজন একজন পরিচালক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গাড়িতে করে অফিসের বাইরে নিতে চাইলে বাধা দেন ইফার সচিব।তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানালে সেখান থেকে বলা হয়, সরকারি গুরত্বপূর্ণ ফাইল যেন বাইরে না যায়।
Advertisement
এ সময় ফাইল নিতে বাধা দেয়ায় ডিজির সঙ্গে সচিবের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে ওইসব ফাইল জব্দ করে নিজ জিম্মায় নেন ইফার সচিব। এ সময় ডিজিকে ঘেরাও করে রাখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবের নির্দেশে ডিজির কার্য়ালয়সহ বিভিন্ন কক্ষে নতুন তালা মারা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে ছুটে যান ইফার বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য মিজবাহুর রহমান চৌধুরী।
ইফা মহাপরিচালকের পদত্যাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামীম মোহাম্মদ আফজালের সঙ্গে সকালে তার কথা হয়। তিনি জানান, আজই তিনি পদত্যাগ করতে আসলেও টাইপিস্ট কেউ না আসায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেননি। আগামীকাল (রোববার) অফিসে এসে তিনি পদত্যাগ করবেন বলে তাকে (প্রতিমন্ত্রী) জানান।
সামীম মোহাম্মদ আফজালের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশেই তাকে ইফা কার্যালয়ে অপমান অপদস্থ করা হয়। প্রতিমন্ত্রীর লোকজন তার কক্ষসহ বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলায়। তাই তিনি পদত্যাগ করা নিয়ে সিদ্ধান্ত বদল করতে যাচ্ছেন।
তবে ইফা মহাপরিচালকের ঘনিষ্ঠজনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মনগড়া মন্তব্য করে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তার (ইফা মহাপরিচালক) চাকরি থেকে সরে যাওয়া উচিৎ।
এমইউ/এমএসএইচ