গাছের ডালে ডালে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির মাটির পাত্র ঝোলানো। তার ভেতর থেকে ফুরত ফুরত বের হচ্ছে শালিক, দোয়েলসহ নানা জাতের দেশীয় পাখি। কয়েকটি পাত্রের ভেতর ছোট বাচ্চার চি-চি আওয়াজও শোনা গেল। চারপাশেই পাখিদের কিচির মিচির শব্দ। প্রকৃতির এমন এক নৈসর্গিক পরিবেশ বিরাজ করছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কৈট্টা প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রে।পাখি প্রেমি কামরুল ইসলাম দেশীয় পাখিদের নিরাপদ বাসস্থান গড়ে দিতে নিজ খরচে এ মাটির পাত্র তৈরি করে গাছের ডালে ঝুলিয়েছেন। প্রশিকা ছাড়াও, তার এই মাটির পাত্রের পাখির বাসা ঝুলানো হয়েছে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের বাসভবন, সাটুরিয়া থানা ও সিংগাইরসহ বিভিন্ন এলাকায়। যেখানে নিশ্চিন্তে আবাস গড়ে বংশ বিস্তার করছে হরেক রকম পাখি।কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ঝড়-বৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাখির বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে ডিম এবং বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বংসবিস্তার কমে যাওয়ায় দেশীয় পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাখির অবদানের কথা মাথায় রেখেই পাখিকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। সেই তাগিদ থেকেই কামরুল ইসলাম চিন্তা করেন কিভাবে পাখিদের জন্য নিরাপদ বাসা তৈরি করা যায়।জাগো নিউজকে কামরুল জানান, ইন্টারনেটে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে প্রথমে কোন ধরনের পাখি কি ধরনের বাসা পছন্দ করে তার একটা ধারণা নেই। কুমার বাড়ি থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে ১শ মাটির পাত্র তৈরি করি। পাখি ভেদে পাত্রের আকার ও আকৃতি আলাদা। বৃষ্টির পানি যেন জমে না থাকে সেজন্য প্রতিটি পাত্রেই ছিদ্র করা হয়। সেগুলো প্রশিকায় ঝোলানো হয়। প্রথমে আমিও শঙ্কিত ছিলাম এই বাসায় পাখি আসবে কিনা। কিন্তু দেখা গেল পাত্র দখলের জন্য প্রতিদিন পাখিতে পাখিতে রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আরো ৫ শতাধিক মাটির পাত্র তৈরি করে যেখানে গাছপালা বেশি সেখানে ঝুলানো হয়েছে।সাটুরিয়ার কৈট্টা গ্রামের বাসিন্দা আক্তার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, প্রশিকায় অনেক গাছপালা থাকলেও পাখিরা বাসা বাঁধতো না। মাটির পাত্রগুলো ঝুলিয়ে দেয়ার পর পাখির আনাগোনা বেড়েছে। মাটির পাত্রে পাখিরা বাচ্চা তুলছে। মাঝে মধ্যে বাচ্চাগুলো পাত্র থেকে পড়ে গেলে আমরা তা তুলে দেই।কামরুল ইসলাম পেশায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা। মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন কালে তিনি এ পাখির বাসা তৈরি করেন। কয়েকদিন আগে তিনি ঢাকায় বদলি হয়েছেন। পাখিদের প্রতি এমন ভালবাসার বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ শুধু মানুষের জন্য নয়। মানুষ সবার জন্য। পাখি-প্রকৃতি সব কিছুকেই রক্ষার দায়িত্ব মানুষের। প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা থেকেই পাখির নিরাপদ বাসস্থানের কথা চিন্তা করেছি। এই কাজ করতে আমার ভালো লাগে। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পাখি রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বানও জানান এ পাখি প্রেমি।এমজেড/আরআইপি
Advertisement