রাজনীতি

যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক অবস্থান কী, জানতে চায় শরিকরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গড়ে ওঠা নতুন জোট যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর হঠাৎ করেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সেই নিষ্ক্রিয় জোটকে আবারও চাঙা করতে বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়। সেই বৈঠকে জোট শরিকদের পক্ষ থেকে জোট প্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক অবস্থান কী? আমরা কি সরকারের অংশ নাকি বিরোধী শিবিরের অংশ? নির্বাচনের পর থেকে এই পর্যন্ত সরকারের ভেতরকার বিভিন্ন সমস্যা, কৃষক-শ্রমিকদের সমস্যা ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যুক্তফ্রন্ট কী করেছে, কী করা উচিত ছিল জানতে চেয়েছে জোট শরিকরা।

Advertisement

আজ শুক্রবার রাজধানীর ট্রপিক্যাল মোল্লা টাওয়ারে অনুষ্ঠিত যুক্তফ্রন্টের সভায় সভাপতিত্ব করেন ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

জোটে শরিক দলের এক নেতা বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করে আলোচনায় আসা এ নতুন রাজনৈতিক জোটটি নির্বাচনের পর আবার চুপসে গেছে। জোটগতভাবে কোনো কর্মসূচি বা কোনো কার্যকারিতা নেই।’

নির্বাচনকে ঘিরে যেভাবে আলোচনা, তোড়জোড়, দৌড়ঝাঁপ তা নিভে যেতেও সময় লাগেনি বলে জোট শরিকদের মন্তব্য। জোটের কার্যকারিতা না থাকায় জোট শরিকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে হতাশা।

Advertisement

আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য যখন বি চৌধুরীকে ছেড়ে চলে যায়, তিনি যখন একেবারেই রাজনীতি শূন্য হতে চলছিলেন তার সেই দুঃসময়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ২০ দলের ৩টি দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দিলে আবারও প্রাণ ফিরে পান বি. চৌধুরী। কিন্তু, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হন তিনি। তবে নিজ দল বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও পুত্র দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহি বি চৌধুরীকে নৌকা মার্কায় সংসদ সদস্য বানাতে সক্ষম হয়েছেন।

যুক্তফ্রন্টের শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা সভায় প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের রাজনীতি কী? উদ্দেশ্য কী? অবস্থান কোথায়? এগুলো পরিষ্কার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার জন্যই আমাদের রাজনীতি। আমরা কি তা করতে পারছি? না পারলে এই ফ্রন্টের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। রাজনীতির প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। নৌকা মার্কায় দুইজন এমপি বানালেই ফ্রন্টের রাজনীতি শেষ হয়ে যায় না।’

অন্য শরিক জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তফ্রন্টের মূল্যায়ন পরিষ্কার নয়, উপজেলা নির্বাচন নিয়েও আমরা অন্ধকারে ছিলাম। গত ৬ মাসে সরকারের নানা ভুল ও দুর্নীতি নিয়ে দলগতভাবে আমরা কথা বললেও ফ্রন্টগতভাবে আমরা কোনো কথা বলি নাই। জনগণের প্রত্যাশার জায়গাটাতে আমরা স্পর্শ করতে পারি নাই।’

Advertisement

তিনি জানতে চান রূপপুরের দুর্নীতি, কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, পাটশ্রমিকদের মজুরি না পাওয়া, নতুন করে গ্যাসের মূ্ল্যবৃদ্ধির পায়তারা-এসকল ক্ষেত্রে জোটের ভূমিকা কী। জোটের রাজনীতি কী।’

ন্যাপ মহাসচিব বলেন, ‘এসব বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান গ্রহণ করতে না পারলে ফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। রাজনীতি মানুষের জন্য, দেশের জন্য। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতির অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।’

যুক্তফ্রন্ট শরিকদের অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনের আগে সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে জোট শরিকদের আসন ভাগাভাগির আশ্বাস দেয়া হলেও কার্যত বি চৌধুরী তা করেননি বা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু নিজ দল বিকল্পধারার স্বার্থ রক্ষা (নির্বাচনে বিকল্পধারার দুই প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনা) ছাড়া শরিকদের জন্য কিছু করতে পারেননি। নিজ পুত্র মাহি বি চৌধুরী ও মেজর মান্নানের আসন নিশ্চিত করা ছাড়া সরকারি দলের সঙ্গে বি চৌধুরী শরিকদের জন্য ন্যূনতম দরকষাকষি করেননি। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর মান্নান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহি বি চৌধুরীর নির্বাচনী প্রতীক আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিশ্চিত করেই তিনি সন্তুষ্ট থেকেছেন। মূলত, এ বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই যুক্তফ্রন্ট নিয়ে জোট শরিকদের মধ্যে মোহভঙ্গ হতে থাকে।

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারা মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মোবিন চৌধুরী বীরবিক্রম, ফ্রন্টের সমন্বয়কারী গোলাম সারোওয়ার মিলন, বিএলডিপি চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন আল আজাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের যুগ্ম মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ মুকিত, মহাসচিব এ এন এম সিরাজুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রধান সংগঠক আবু লায়েস মুন্না, বাংলাদেশ লেবার পার্টি চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদী প্রমুখ।

এইউএ/এসআর/এমকেএইচ