খেলাধুলা

টনটনের ছোট মাঠে মিরাজকে নিয়ে দোটানায় টিম ম্যানেজমেন্ট

‘আচ্ছা, মেহেদী হাসান মিরাজকে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলানো হবে? বাংলাদেশ কি এই অফস্পিনারকে একাদশে রেখে মাঠে নামবে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে?’ অন্য কোন সময় হলে যে কেউ বলতেন অবান্তর প্রশ্ন।

Advertisement

এটা কি করে হয়? বাংলাদেশের বোলিং শক্তির মূল অস্ত্রই স্পিনাররা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কাঁধের ইনজুরির কারণে বল করতে পারছেন না। স্পিনার বলতে সাকিব আর মিরাজ। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে মোসাদ্দেককেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

মিরাজ না খেললে তো একজন বোলার কমে যাবে, ৫০ ওভারের কোটা পূর্ণ করতে অন্তত পাঁচজন বোলার তো লাগবে! মিরাজ বাইরে গেলে সেই বোলার হবেন কে?

ওপরের অংশটুকু পড়ে যে কেউ এমন প্রশ্নই করবেন হয়তো। তবে ভিতরের খবর হলো- টনটনের ছোট মাঠ, পাশে ও উইকেটের সামনে আকৃতিতে কম আউটফিল্ডে স্পিনার খেলানোয় থাকছে বাড়তি ঝুঁকি। সে কারণেই টনটনে একজন স্পিনার কমিয়ে চার পেসার দিয়ে দল সাজানোর কথা ভাবা হচ্ছে।

Advertisement

গত ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় অনেকেই বলাবলি করছেন, টনটনের মাঠ আকারে বেশ ছোট। শুধু দুই দিকে বা স্কোয়ারে নয়। টনটনের মাঠের আকার সোজা, মিড অফ-মিড অনেও অন্য সব মাঠের চেয়ে কম। সেখানে স্পিনারদের স্কোয়ারে আর মিড অফ, মিড অনের মাথার ওপর দিয়ে তুলে সীমানার ওপারে পাঠানো বেশ সহজ।

এমন কথা মাথায় রেখেই এই মাঠে গতকাল (বুধবার) পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার দুই দলই চার জন করে ফাস্টবোলার আর পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছিল। অস্ট্রেলিয়ান লাইন আপে ছিলেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, কেইন রিচার্ডসন আর নাথান কল্টার নাইল।

আর অন্যদিকে পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ, শাহিন শাহ আফ্রিদি আর হাসান আলি। স্পিনার ছিল না বললেই চলে।

একই মাঠে আগামী ১৭ জুন কি করবে বাংলাদেশ? ছোট মাঠে একটু তুলে মারলেই চার-ছক্কা হবে। স্পিনাররা মার খেতে পারেন। এমন চিন্তায় মিরাজকে বাইরে নিয়ে পেসার রুবেল হোসেনকে খেলানোয়ও আছে অন্য রকম সমস্যা।

Advertisement

মনে রাখতে হবে, প্রতিপক্ষ ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন আপে কিন্তু ক্রিস গেইল, শাই হোপ, সিমরন হেটমেয়ার এবং আন্দ্রে রাসেলের মত খুনে উইলোবাজ আছেন। যাদের ‘পাওয়ার হিটিং’ জগত সেরা। যারা নিজেদের দিনে যে বোলিং শক্তিতে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন। আর মাঠ আকারে ছোট হলে স্পিনারদের সর্বনাশ করে ছাড়তে পারেন।

তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কি বাংলাদেশ সাকিবের সাথে মিরাজকে খেলাবে? মানে দুই স্পিনার নিয়ে মাঠে নামবে? নাকি মিরাজকে বাইরে রেখে মাশরাফি, মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দীনের সাথে চতুর্থ পেসার হিসেবে রুবেল হোসেনকে খেলানো হবে-এমন চিন্তা কিন্তু আছে। ভিতরে ভিতরে টিম ম্যানেজমেন্ট এমন ভাবছেও।

তবে পেসার রুবেলকে খেলানোয়ও আছে অন্য রকম সমস্যা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারের দুই মূল ব্যাটিং স্তম্ভ বাঁহাতি। ক্রিস গেইল আর এভিন লুইসকে শুরুতে আটকে রাখবেন কে? এই দুই আক্রমণাত্মক, ধ্বংসাত্মক বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটিং তোড় সামলাতে যে তাদের বিপক্ষে একজন ডান হাতি অফস্পিনার দরকার! মিরাজকে বাইরে নিলে গেইল আর লুইসের শুরুর তোড় সামলাবেন কে? এসব চিন্তা-ভাবনাও চলছে।

বাংলাদেশের স্পিন কোচ হিসেবে এ অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োচিত ইস্যুতে সুনীল জোসির চিন্তা-ভাবনা কি? তার মত কি? জানতে চাওয়া হলে জোসি কিন্তু নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারেননি যে, মিরাজই খেলবেন। বরং তার কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি নিজেও হয়ত বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায়।

আর বাংলাদেশের বোলিং শক্তিটাই এমন যে, দলে চার পেসার খেলানোও একটু জটিল। তাতে একজন স্পিনার কমে যায়। ব্যাটিং পারফরমারের সংখ্যাও হ্রাস পায়। তাই মাশরাফি, মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দীনের সাথে রুবেলকে যোগ করে সোজা চার পেসার নিয়ে মাঠে নামা একটু কঠিন বৈকি। তাতে বোলিং বৈচিত্র্যও যায় কমে।

তাই জোসির কূটনৈতিক জবাব, ‘আমাদের আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করতে হবে। কাকে দিয়ে কিভাবে টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সামলানো হবে-তা বিচার বিবেচনা করেই আমরা লক্ষ্য ও পরিকল্পনা করবো। সেভাবেই ছক কষা হবে।’

প্রশ্ন উঠলো সাকিবের স্পিন বোলিং কার্যকারিতা নিয়ে। বলা হলো, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে দূর্বার। প্রতি ম্যাচে পঞ্চাশ থেকে একাশো‘র মধ্যে রান করছেন। কিন্তু বোলিং সেভাবে ভাল হয়নি। স্পিনার সাকিবকে স্ব মূর্তিতে দেখা যায়নি এখনো। এটা কি কোন চিন্তার কারণ?

জোসির আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ, ‘মোটেই না। আমরা সবাই চাই সাকিব সঠিক সময় জ্বলে উঠুক। যে ম্যাচে দরকার, সেই ম্যাচেই বোলার, স্পিনার সাকিব তার সেরাটা দিক। সেটাই কাম্য।’

এআরবি/এমএমআর/পিআর