পাহাড়, নদী, হাওরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘিরে নেত্রকোণায় রয়েছে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেই এ এলাকা হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটনীয় জেলা। তবে ইতোমধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নানামুখি পদক্ষেপ নেওয়ায় উৎসবকে কেন্দ্র করে হাওরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চল পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
Advertisement
ঈদ উপলক্ষে বর্ষার স্বচ্ছ জলরাশি দেখতে পর্যটকরা ভিড় করছেন নেত্রকোণা জেলার হাওরাঞ্চলগুলোতে। শেষ বিকেলে পানির ঢেউ, তার ওপর সূর্যের আলো যে কারও মন ভোলাবে। পুলিশি নিরাপত্তা ও খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, থাকার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবি জানিয়েছে আগত পর্যটকরা।
নেত্রকোণার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাওরাঞ্চল। তবে মদন উপজেলার উচিতপুর এলাকায় বালই ব্রিজের দুই প্রান্তে রয়েছে প্রায় দু’ কিলোমিটার ডুবন্ত সড়কপথ। যেখানে ভোরের সূর্যোদয় এবং শেষ বিকেলের সূর্যের আলো মন ভোলায় যে কারো। বাতাসের ছোট ছোট ঢেউয়ে নৌকা দোলানোর স্বাদ পেতে প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে সকল শেণিপেশার দর্শনার্থী বেড়ে যায় কয়েক গুণ। নৌকা ও ট্রলার নিয়ে ঘুরে বেড়ান এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
> আরও পড়ুন- খুলে দেওয়া হলো সোনারগাঁয়ের বড় সর্দারবাড়ি
Advertisement
নেত্রকোণার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুড়ি- এ তিন উপজেলার গ্রামের হাওরদ্বীপ এলাকায় বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া বিচ্ছিন্ন থাকে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। সেই হাওরাঞ্চলে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও নেই থাকা-খাওয়ার তেমন সুবিধা। তাই অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে ঘুরতে আসা পর্যটকদের।
সম্প্রতি হাওর পাড়ে তাসিন ফুডপার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠান পর্যটকদের খাবারের চাহিদা কিছুটা হলেও মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আসাদুজ্জামান রাহি বলেন, ‘হাওর এলাকা দেখতে প্রতিদিন ৫-৬ হাজার লোক আসেন। আমি ১ থেকে দেড় হাজার লোকের খাবার তৈরি করতে পারি। আরও কয়েকটি খাবারের দোকান হলে পর্যটকদের আর সমস্যা থাকতো না।’
স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেড়াতে আসা চাকরিজীবী মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে এত এত লোকজন আসে অথচ নেই কোন রেস্ট রুম, নেই খাবার পানি, ওয়াস রুম, নেই বসার যায়গা আর খাবারের ভালো কোন হোটেল। সারাদিন ঘুরে ফিরে শেষে আনন্দটাই মাটি হওয়ার উপক্রম হয়।’
> আরও পড়ুন- সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটায় স্মৃতিময় ভ্রমণ
Advertisement
মদনের উচিতপুর এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আনন্দিত এ জন্য যে, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এখানে আসে। সারাদিন নৌকায় চড়ে বেড়ায়, হেঁটে বেড়ায় ডুবন্ত রাস্তায়। শিশুসহ অনেকে গোসল করে হাওরের পানিতে। মাঝে মাঝে বড় বড় ঢেউ হয়। অথচ এখানে নেই কোন নৌ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।’
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়ালীউল হাসান বলেন, ‘হাওরাঞ্চলকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় কাজ করছে সরকার। পানীয় জলের ব্যবস্থা করাসহ আগামীতে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। পরের বছর থেকে আর এ অসুবিধাগুলো থাকবে না।’
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে ডুবন্ত সড়ক এবং শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক নির্মাণ হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। বর্ষায় ভিড় বাড়বে ভ্রমণপিপাসু লোকজনের। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
কামাল হোসাইন/এসইউ/এমকেএইচ