ফরিদপুর জেলার অর্ধশত এলাকায় গত দু’বছর যাবত চাষ করা হচ্ছে সুস্বাদু বারোমাসি হলুদ ও লাল তরমুজ। গত বছর স্বল্প পরিসরে এ ভিন্নধর্মী দু’ ধরনের তরমুজ চাষ করে বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষ বেড়ে এবার দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এ তরমুজে কৃষকরা বেশি লাভবান হওয়ায় সামনের বছরগুলোতে চাষ বেশি হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এদিকে ভিন্নধর্মী এ তরমুজ জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
Advertisement
জানা যায়, জেলার সদরপুর, ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী, সাতৈর, কাটাখালী, শৈলডুবি, মজুমদার বাজার ও যাত্রাবাড়ীসহ অর্ধশতাধিক এলাকায় গত বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বারোমাসি হলুদ ও লাল তরমুজ চাষ শুরু হয়। বিশেষ করে এ দু’ ধরনের তরমুজ কৃষকরা বিষমুক্তভাবে চাষ করছেন।
হলুদ তরমুজ (কার্নিয়া) ও লাল তরমুজ (সুইট ব্লাক-২) মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। এরমধ্যে হলুদ তরমুজ মাটিতে এবং লাল তরমুজ মাচাসহ (ব্যালচিং পদ্ধতি) মাটিতেও চাষ করা যায়। তেমন কোন পরিশ্রম না থাকায় খুব সহজে এ তরমুজ চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে কী পরিমাণ জমিতে এ তরমুজ চাষ হয়েছে তার কোন তথ্য দিতে পারেনি কৃষি অফিস। কৃষি অফিস জানায়, তাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে।
> আরও পড়ুন- কলার দামে চাষিরা খুশি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
Advertisement
কাটাখালী এলাকার হলুুদ তরমুজ চাষি লিটন ফকির বলেন, ‘আমি প্রথম এ এলাকায় হলুুদ তরমুজের চাষ শুরু করি। আমার সফলতা দেখে অন্যরা এ চাষ শুরু করেন। আমি তাদের নানাভাবে সাহায্য করেছি। দত্ত সীডের মালিক তাপস দত্ত আমাকে প্রথমে এ বীজ দেন। তিনি মাঠে এসে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলেই সুফল পেয়েছি।’
ভাঙ্গার সাদিপুর এলাকার কৃষক শেখ জুয়েল বলেন, ‘আমি ১০ শতাংশ জমিতে তাপসদার কথা মতো পরীক্ষামূলকভাবে সুইট ব্লাক-২ তরমুজ চাষ শুরু করি। আমার খরচ হয়েছে মাত্র ৮-১০ হাজার টাকা। ক্ষেতের মাঝপথে এসে এ পর্যন্ত বিক্রি নেমেছে ৫০ হাজার টাকা। আশা করছি আরও হবে।’
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে আসা সুমন মাতুব্বর বলেন, ‘দেশের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারণে যে দামই হোক, আমরা এ তরমুজ কিনতে আসি। দাম বেশি বলেই এর পার্থক্য সবার থেকে আলাদা।’
> আরও পড়ুন- পেয়ারা চাষ করে যেভাবে সফল হলো দুই বন্ধু
Advertisement
দত্ত সীডের মালিক তাপস দত্ত জানান, থাইলান্ড থেকে তিনি এ বীজ সংগ্রহ করেছেন। গতবছর কয়েকজন কৃষককে এ জাতের বীজ দেওয়া হয়। এরপর অন্যরা এ তরমুজের চাষ শুরু করেছেন। তার আশা, এ তরমুজ বেশি সুস্বাদু হওয়ায় এবং বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এর চাষ অনেক বাড়বে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্ত্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘সুস্বাদু ও বারোমাসি হলুদ ও লাল তরমুজ স্বল্প সময়ের ফসল হওয়ায় কৃষকের জন্য লাভবান ফসল। ফলে এ তরমুজের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’
বি কে সিকদার সজল/এসইউ/এমকেএইচ