দেশজুড়ে

বগুড়ায় ১৬ জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত

বগুড়ায় নাশকতার মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের অজুহাতে একের পর এক জনপ্রতিনিধিদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর গত তিন মাসে বগুড়ায় মোট ১৬ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ছয় জন ভাইস চেয়ারম্যান, একজন পৌর মেয়র ও দুজন ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছেন। তাদের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশে আবার তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন। এতে করে বগুড়ায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ মামলার আসামি অর্ধ শতাধিক জনপ্রতিনিধিরা বরখাস্ত আতঙ্কে ভুগছেন। বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন জাগো নিউজকে জানান, অন্যায়ভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। বিএনপির সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের অযথা মামলা দিয়ে সরকার তাদের বরখাস্ত করছে। এতে করে বিএনপি সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা বরখাস্ত আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বরখাস্তের পর ভারপ্রাপ্ত দিয়ে এসব উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ চলছে। এর ফলে সার্বিক কর্মকাণ্ডে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন ঘটনায় বগুড়ার বিভিন্ন থানায় ৩৮ জন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ১৫টির চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। সে কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগ তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আলহাজ দবিবুর রহমান, নন্দীগ্রামে জামায়াত নেতা নূরুল ইসলাম মণ্ডল, শিবগঞ্জে জামায়াত নেতা মাওলানা আলমগীর হোসাইন, দুপচাঁচিয়ায় জামায়াত নেতা আব্দুল গণি মণ্ডল, সোনাতলায় বিএনপি নেতা একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির ও গাবতলীতে বিএনপি নেতা মোর্শেদ মিল্টন। তাদের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশে দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন শেরপুর, নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান। তবে নাশকতার মামলায় বর্তমানে নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কারাগারে রয়েছেন।বরখাস্ত হওয়া ভাইস চেয়ারম্যানরা হলেন, দুপচাঁচিয়ায় বিএনপি নেতা আব্দুল মোত্তালেব মিন্টু, শেরপুরে বিএনপি নেতা আরিফুর রহমান মিলন, শিবগঞ্জে জামায়াতের আব্দুস সামাদ, আদমদিঘিতে জামায়াতের ইউনুস আলী, শাজাহানপুরে বিএনপির জহুরুল ইসলাম জাহেরুল ও কাহালুতে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাইফুল ইসলাম।তবে হাইকোর্টে রিটের পর দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন দুপচাঁচিয়া, শেরপুর ও শিবগঞ্জের ভাইস চেয়ারম্যান। এদের মধ্যে কাহালুর ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা ছাড়া অন্যরা সবাই রাজনৈতিক মামলার আসামি। জেলায় তিনজন পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা হলেও শেরপুরের পৌর মেয়র বিএনপি নেতা স্বাধীন কুমার কুণ্ডুর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।এছাড়া জেলায় ১৮জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অস্ত্র, নাশকতা, ভাঙচুর, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, অস্ত্র আইনে শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু, নারী ও শিশু নির্যাতন, অর্থ আত্মসাতসহ কয়েকটি মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউপি চেয়ারম্যান শফি আহমেদ স্বপন। হাইকোর্টে রিটের পর দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন রায়নগরের ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু। এছাড়া বগুড়া পৌরসভাসহ বিভিন্ন পৌরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের বিররুদ্ধে মামলা রয়েছে। তবে এখনও কেউ বরখাস্ত হননি।বগুড়া জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুল হক জাগো নিউজকে জানান, এ সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বগুড়ায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়র পদে ২০ জন জামায়াত সমর্থিত জনপ্রতিনিধিকে বিভিন্ন মামলার চার্জশিট দিয়ে এবং গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে যেসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তারা বরখাস্ত আতঙ্কে রয়েছেন। এ কারণে অনেকে অফিস করতে পারেন না। তারা কেউ কেউ গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন।লিমন বাসার/এমজেড/এমএস

Advertisement