ক্রিকেট শুধু খেলা নয়। কিংবা বিনোদন, ভালোলাগা, ভালবাসা, আনন্দ আর উৎসবের উপলক্ষও নয়। তার চেয়েও অনেক কঠিন। কখনো কখনো নির্মমও বটে।
Advertisement
এই যেমন আজ (মঙ্গলবার) সারাদিন অপেক্ষায় থেকে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে খেলা না হওয়ায় রাজ্যের হতাশা সঙ্গী হলো মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহদের। আর সেই কাকডাকা ভোরে উঠে সারাদিন টিভির সামনে বসে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে বসে থাকা কোটি কোটি বাংলাদেশ সমর্থক হলেন হতাশায় নিমজ্জিত।
না পাওয়া হতাশাই বেশি। ইস! যদি খেলা হতো, তাহলে নির্ঘাত জিততাম আমরা! জিতে আবার ছন্দ ফিরে পেত আমাদের প্রিয় জাতীয় দল। এমন আক্ষেপই এখন কোটি বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়জুড়ে।
কিন্তু কঠিন সত্য হলো, এখন আর করার কিছুই নেই। ‘পয়োমন্তঃ’ ভেন্যু কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ইংলিশদের কাছে হারের পর আজ ব্রিস্টলে অপয়া বৃষ্টি কেড়ে নিল সম্ভাব্য জয়। দুই পয়েন্টের বদলে এক পয়েন্ট নিয়েই হোটেলে ফিরতে হলো মাশরাফিদের।
Advertisement
কঠিন সত্য হলো, এই না পাওয়া বেদনা আর আক্ষেপে পোড়ার কিন্তু সময় নেই। নিঃশ্বাস ফেলারও ফুরসত নেই। এটাই বিশ্বকাপের নির্মমতা। আফসোস-অনুশোচনায় পোড়ারও অবকাশ নেই। এখনই প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে, পরের ম্যাচের জন্য। কারণ, লক্ষ্য যে সেমিফাইনালে খেলা!
সে লক্ষ্য পুরণে সামনের পাঁচ ম্যাচের অন্তত তিনটিতে জয় একান্তই জরুরি। আপাততঃ প্রথম কাজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো। ১৭ জুন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ স্বপ্ন জিইয়ে রাখার লড়াই হয়ে গেছে।
তাই কোচ, অধিনায়কসহ পুরো দলকে আজকের পয়েন্ট খোয়ানোর বেদনা চট জলদি ভুলে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের দিতেই চোখ রাখতে হচ্ছে। কিন্তু করতে হচ্ছে ক্যারিবীয়দের হারানোর। আঁটতে হচ্ছে রনকৌশল।
ক্রিস গেইল, সাই হোপ, হেটমায়ারের মত তুখোড় উইলোবাজকে থামানোর চিন্তাই করতে হচ্ছে বেশি। একই সঙ্গে এ মুর্হর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং খুনে ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেলকে থামিয়ে রাখার কাজটিও করতে হবে বোলারদের। তামিম, সৌম্য, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ এবং মোসাদ্দেকদের সামলাতে হবে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার ওশানে থমাস আর শেলডন কটরেলকে।
Advertisement
এসব নিয়ে কি ভাবছেন বাংলাদেশ দলের কোচ স্টিভ রোডস? এর মধ্যে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ হবে টনটনে। যেটা এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে ছোট ভেন্যু। আয়তনে আকারে ক্ষুদ্র। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা তো এই মাঠে ছক্কার ফুলঝুরি ছোটাতে পারে।
সুতরাং, টনটনে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের থামাতে বাংলাদেশের বোলারদের করণীয় কি? সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নর জবাবে স্টিভ রোডস বললেন, ‘আমরা শুধু ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে নিয়েই ভাবছি না। আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনায় আছে বাকি সব দলও, যাদের সাথে আমাদের খেলা বাকি আছে- তাদের সবার কথাই ভাবছি।’
আগের ম্যাচগুলোর প্রসঙ্গ টেনে কোচ রোডস বলেন, ‘আমরা আগের তিন খেলা থেকে কিছু না কিছু শিখেছি। রপ্ত করেছি। সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে, আমাদের ব্যাটসম্যানরা সেভাবে শর্ট বলে ভড়কে যায়নি। বেশ আস্থার সাথে প্রতিপক্ষের খাট লেন্থের বলগুলো মোকাবিলা করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শর্ট বল বেশ ভাল খেলেছে আমাদের ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ডের অর্চারকেও মন্দ খেলেনি আমাদের ব্যাটসম্যানরা।’
তো তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরিকল্পনা কি? কোচ বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে আমরা খেলে আসলাম মাত্র। আয়ারল্যান্ডে যদিও ওশানে থমাস ছিলেন না। তবে তাকে আমরা এ বছরই পেয়েছি নিজেদের দেশে। কাজেই আমরা সচেতন আছি। করণীয়ও মোটামুটি স্থির করা আছে। এখন মাঠে তা প্রয়োগটাই আসল।’
আপনি বললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘরের মাঠে এবং আয়ারল্যান্ডে পেয়েছেন, দেখেছেনও। ক্যারিবীয়দের কোন জায়গাটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে? দলটিতে গেইল, সাই হোপ আর আন্দ্রে রাসেলের মত বিপজ্জনক এবং বিধ্বংসী সব ব্যাটসম্যানরা আছেন। তাদের থামাতে কোন বিশেষ পরিকল্পনা? এছাড়া ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারদের শর্ট বলের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানরা কি করবে?
এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ কোচ একটু ঘুরিয়ে উত্তর দিয়েছেন। তিনি আন্দ্রে রাসেলকে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও কার্যকর অস্ত্র বলে অভিহিত করে বলেন, ‘আমার মনে হয়, ক্যারিবীয়দের প্রধান অস্ত্র হলেন আন্দ্রে রাসেল। এখন তিনি বিশ্বের সেরা হিটার। তার দিনে সব কিছু করতে পারেন। প্রতিপক্ষ বোলিং দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন। তার বিপক্ষে বল করা এবং তার বিধ্বংসী উইলোবাজি আটকে রাখা খুব কঠিন।’
আন্দ্রে রাসেলকে ঠাণ্ডা রাখাটাই মূল লক্ষ্য রোডসের। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় আন্দ্রে রাসেলের কথা ভাবা হচ্ছে বিশেষভাবে। আমি বিশ্বাস করি আন্দ্রে রাসেলকে ঠান্ডা রাখতে পারলে কাজটা সহজ হয়ে যাবে। আর শর্ট বল নিয়ে আমি ভীত নই। আশা করি আমাদের ব্যাটসম্যানরা শর্ট বল মোকাবিলা করবে ভালভাবেই।’
এআরবি/আইএইচএস