দেশজুড়ে

বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু

ঈদকে সামনে রেখে ভারত থেকে যশোরের বেনাপোল-শার্শার বিভিন্ন সীমান্ত পথে বাংলাদেশে গরু আসতে শুরু করেছে। ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরও চোরাই পথে আসছে গরু। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলি ও নির্যাতন উপেক্ষা করে জীবনের মায়া ত্যাগ করে গরু আনতে ছুটছেন গরু ব্যাপারি ও রাখালরা। বেনাপোল-শার্শা সীমান্ত পথে কখনো বিএসএফের সঙ্গে সমঝোতা ও কখনো বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝে মধেই আসছে গরু। ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে গরু পাঠাতে প্রস্তুুত রয়েছেন। এতে দেশের কোরবানির পশুর বিদ্যমান ঘাটতি দূর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সীমান্তের এপারে উন্মুখ হয়ে আছেন গরু আনার জন্য। অন্যদিকে ভারতীয় বেপারিরাও সেদেশের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো করছেন গরু-মহিষ। এই নিয়ে দুই দেশের বেপারিদের মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য শুরু হয়ে গেছে। দিন যত আসছে এ বাণিজ্য তত জোরালো হয়ে উঠার সম্ভাবনা দেখছেন বেপারিরা। একই সঙ্গে বৈধ প্রক্রিয়ার পাশাপশি অবৈধ প্রক্রিয়ায়ও এ বাণিজ্য চলছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পুটখালীর বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গের আংরাইল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে গরু পাচার বন্ধ করার জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রধান আশিস মিত্রকে নির্দেশ দেন। গরু চোরাচালানীদের দেখা মাত্র গুলিরও নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ইছামতি নদীতে স্পিড বোর্ড নামিয়ে নজরদারি করে বিএসএফ। সীমান্তে কড়াকড়রি কারণে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও মাঝে মধ্যে চোরাইভাবে কিছু গরু আসলেও বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। যশোরের বেনাপোল ও শার্শা সীমান্তের পুটখালী, অগ্রভুলোট, গোগা ও রুদ্রপুর করিডোর দিয়ে গরু আসা গত ছয় মাসে ১০ শতাংশে নেমে আসে। ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়ে সীমান্তের পশুহাট ও খাটালের উপর। ঈদকে সামনে রেখে সবাই যখন রোজগারের ধান্দায় ব্যস্ত থাকে তখন গরু আনা নেওয়ার রাখাল, গরু ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, পশুহাট ও খাটালের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকার যুক্ত প্রায় ৪০ হাজার লোক বেকার হয়ে পড়েন। পুনরায় গরু আসায় আবারও এসব মানুষের মুখে কিছুটা হলেও হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।   বিশেষ করে ৯০ শতাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বীর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এ শিথিলতা দেখাতে শুরু করেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের জওয়ানরা। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলার সীমান্ত দিয়ে গরু আসতে শুরু করেছে।যশোরের নাভারন পশু শুল্ক করিডোরের হিসেব মতে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের জুলাই-১৪ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আট মাসে শুল্ক করিডোর করা হয়েছিলো চার লাখ ৭৫ হাজার ৭৬০টি পশু। যা থেকে সরকার রাজস্ব পায় ২৩ কোটি ৭৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮শ টাকা। অথচ চলতি বছরের মার্চ-১৫ থেকে ৩১ আগস্ট-১৫ পর্যন্ত ৬ মাসে শুল্ক করিডোর করা হয় মাত্র ২০ হাজার ৫শ ৯৩টি পশু। যা থেকে সরকার রাজস্ব পায় ১ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ৯শ টাকা। অর্থাৎ আগে গড়ে প্রতি মাসে গরু আসার সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার ৪শ ৭০টি। আর বর্তমান সময়ে মাসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪শ ৩২টি বলে জানিয়েছেন যশোরের নাভারন গবাদি পশু শুল্ক করিডোরের সহকারি রাজস্ব অফিসার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে গরু আসার সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিনে ৩ হাজার ৩ শ ২টি গবাদি পশু করিডোর করা হয়েছে। এর থেকে রাজস্ব আহরণ হয় ১৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা।   বাংলাদেশে ভারতীয় গরুর সবচাইতে বড় ‘খাটাল’ যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোলের পুটখালিতে অবস্থিত। ভারত থেকে প্রতিদিন এই খাটালে গড়ে তিন হাজার গরু আসতো তবে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে এক শতাংশে। নতুন করে গরু আসবে বলে কথা বার্তা চলছে। পুনরায় এ পথে গরু আসলে ব্যবসায়ীসহ এলাকার শত শত মানুষের উপকার হবে। কেউ বেকার হয়ে পড়বে না বলে জানান খাটাল মালিক রফিকুল ইসলাম। পুটখালির গরু ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, এক সময় পুটখালিসহ আশপাশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রতি দিন কয়েক হাজার করে গরু-মহিষ-ছাগল আসত ভারত থেকে। কিন্তু এক বছর থেকে বেনাপোল শার্শার সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষ আসতে দিচ্ছে না ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বর্তমানে ভারত থেকে কিছু গরু-মহিষ আসছে বেনাপোল-শার্শার চারটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে। এ আসা অব্যাহত থাকলে আসন্ন কোরাবানিতে দেশে কোরবানির চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে। পুটখালি গরু হাটের সরকারি ইজারাদার নাসিমুল হক পিন্টু জাগো নিউজকে জানান, এখানে ভারত থেকে যে গরু আসে তা মূলত বাইরের জেলার পাইকাররা ট্রাকে করে কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে কিছু গরু আসার খবরে ব্যবসায়ীরা আবার এখানে আসতে শুরু করেছেন। ঈদের আগে ভারত থেকে আরো কিছু গরু আসবে বলে জানান তিনি।    দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশু হাট হচ্ছে শার্শার বাগআঁচড়া সাতমাইল পশুহাট। এ হাটের ৯০ শতাংশ গরু ভারতীয়। সর্বোচ্চ আদালতে মামলা থাকায় হাটটির বর্তমান নিয়ন্ত্রণ করছে উপজেলা প্রশাসন। শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে বলেন, গতবছর প্রতি হাটে গড়ে পশু বেচাকেনা হতো ১৭ হাজার ৩শ ৮৪টি অথচ ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় এখন বেচাকেনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে গড়ে এক হাজার দুই শ তে। খুলনা ২৩ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, যশোর সীমান্তের পুটখালী, অগ্রভুলোট, গোগা ও রুদ্রপুর করিড়োর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার গরু আসতো। এখন আসছে একশ থেকে হাজার পর্যন্ত। গত ৪ সেপ্টেম্বর সর্ব্বোচ ১৩০৩টি গরু এসেছে। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর এসেছে ১০৩৭টি গরু। সীমান্তের বিজিবি সদস্যরা ভারত থেকে আসা গরুর শুল্ক পরিশোধের পর ছাড় দিয়ে থাকে। শুল্ক পরিশোধ ছাড়া কোন গরু ছাড় দেয়া হয় না বলে তিনি জানান। মো. জামাল হোসেন/এমজেড/এমএস

Advertisement