রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেই মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জু ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার কমিশনারের বিশেষ প্রতিনিধি সাবেক আইরিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যামন গিলমোর। এসব বিষয় নিয়ে মিয়ানমার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বৈঠকের পর এসব কথা বলেন তারা।
Advertisement
ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জু বলেন, রোহিঙ্গাদের মুখে শোনা নিপীড়নের কাহিনী বিবেকবান সবাইকে স্তব্ধ করবে। এতদিন গণমাধ্যমে শুনে আসলেও আজ ক্যাম্পে এসে রোহিঙ্গাদের মুখে নির্যাতনের তথ্য সরাসরি জানা সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটা লৌমহর্ষক ঘটনায় মিয়ানমারের বিচার হওয়া উচিত।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে উখিয়ার কুতুপালং ২নং ক্যাম্প ডি-৫ ব্লকের ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে চীনা রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। বৈঠকে এক নারীসহ ১০ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে নেতৃত্ব দেয়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, চীনা রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের কথা জানতে চাইলে, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বর্ণনা শুনে হতবাক হন তিনি। জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে মিয়ানমারকে।
Advertisement
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম, রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ, আন-রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর, আবদুর রহিমসহ ১০ রোহিঙ্গা নেতা। চীনের রাষ্ট্রদূত বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশে কুতুপালং ক্যাম্প ত্যাগ করেন।
অপরদিকে একইদিন কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার কমিশনারের বিশেষ প্রতিনিধি সাবেক আইরিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যামন গিলমোর। মঙ্গলবার দুপুরে কুতুপালং ডি-৫ ব্লকে রোহিঙ্গা কর্তৃক উৎপাদিত সাবান ফ্যাক্টরি ও টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় অ্যামন গিলমার নারীসহ ১০ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে মিয়ানমারে সংগঠিত নিপীড়ন সম্পর্কে জানতে চান।
এ সময় উপস্থিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া হত্যা, গণধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগসহ সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব, বসত-বাড়ি ফেরতসহ গণহত্যার বিচার দাবি করে। তা না হলে তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে না। রোহিঙ্গাদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন অ্যামন গিলমার।
এর জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিদিধি দলের নেতা গিলমোর বলেন, আগামী শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিম, মাস্টার ছৈয়দ, সাদেক, সিরাজুর রহমান, মো. শফি, মাস্টার ইলিয়াছ, মাস্টার রহিমসহ ১০ রোহিঙ্গা।
Advertisement
উল্লেখ্য, সোমবার (১০ জুন) দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশে সফরকালে রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক দিকসহ নানান বিষয় নিয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে বৈঠক করবেন তারা। মিয়ানমারের নীতিনির্ধারকের সাথেও বৈঠকের কথা রয়েছে। বিকেলে অ্যামন গিলমোর কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামের সাথে বৈঠক করেন।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ