স্বাস্থ্য

শতভাগ নিয়ম মেনে কিডনি প্রতিস্থাপিত হচ্ছে কিডনি ফাউন্ডেশনে

কিডনি কেনাবেচা নিয়ে প্রতারণা ও অবৈধ ব্যবসার বিস্তর অভিযোগ থাকলেও দেশে শতভাগ নিয়ম মেনে কিডনি প্রতিস্থাপন করছে বেসরকারি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। গত চার বছরে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত সুনাম ও সফলতার সঙ্গে এ হাসপাতালটিতে দেড় শতাধিক রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে।  অনুসন্ধানে জানা যায়, এ হাসপাতালে কিডনিদাতা ও গ্রহীতার রক্তের সম্পর্ক নির্ধারণে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে দাতা ও গ্রহীতাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) স্থাপিত ন্যাশনাল ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে তবেই অস্ত্রোপচার করা হয়। শুধু তাই নয়, সম্পর্ক নির্ধারণে চার সদস্যের আত্মীয়তা যাচাইবাছাই কমিটি রয়েছে। কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন- একজন ব্যারিস্টার, একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী ডক্টরেট, বহিরাগত একজন অধ্যাপক ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের পরিচালক। জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ জানান, ২০১১ সালে জয়পুরহাট ও কালাইয়ে কিডনি কেনাবেচা ও প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া নিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর থেকে তারা ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া কোনো রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করছেন না। তিনি জানান, রোগীর বিভিন্ন আত্মীয় যেমন; বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু, মামা ও খালা, স্বামী-স্ত্রী কিডনি দান করতে পারছে। তবে সকলের ক্ষেত্রে ভোটার আইডি, স্থানীয় চেয়ারম্যান বা কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র ও স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে কাবিননামা জমা দেয়ার পাশাপাশি ডিএনএ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ২১দিনের প্যাকেজে এ হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা খরচ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিডনিদাতা ও গ্রহীতা কিডনি প্রতিস্থাপনের ৭ দিন আগে হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি হন। নতুন করে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উভয়ই কিডনি দান ও গ্রহণে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে তবেই অস্ত্রোপচার করা হয়। আত্মীয় পরিচয় নিশ্চিত হতে এ সময় দাতা ও গ্রহীতার গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর কিডনিদাতাকে ৭ দিন ও কিডনি গ্রহীতা রোগীকে আরো ১৪ দিন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। অধ্যাপক হারুন জানান, রোগীদের কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়া হলেও প্রকৃত খরচ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। বাকি টাকা তারা ফাউন্ডেশনের ফান্ড থেকে ব্যয় করেন। হাসপাতালে রোগীদের ডায়ালাইসিসও সাশ্রয়ী মূল্যে করা হয় বলে জানান তিনি।জানা গেছে, ২০০২ সালে কিডনি ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে। ২০০৩ সালের অক্টোবরে ধানমন্ডিতে মাত্র ৭৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল চালু হয়। ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভাড়া বাড়িতে মাত্র ৭ জন স্টাফ ও ব্যাংক ঋণে কেনা ৬টি ডায়ালাইসিস মেশিন ছিল। ২০১১ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর মিরপুরে ১৫০ শয্যার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল চালু হয়। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ দেড় শতাধিক জনবল রয়েছে।এমইউ/এসএইচএস/একে/এমএস

Advertisement