পেয়ারা অন্যতম জনপ্রিয় ফল। দেশের সর্বত্রই এ ফল জন্মে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এলাকায় চাষ হয়ে থাকে। পেয়ারা গাছ কম সময়ের মধ্যে ফল দেয় এবং চাষের জন্য বেশি জায়গা প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনায় দু’একটি গাছ থাকলে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রিও করা যায়।
Advertisement
পুষ্টিমান: পেয়ারাকে অনেকে বলে থাকেন ‘গরিবের আপেল’। পেয়ারার গুণাগুণ আপেলের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। পেয়ারায় ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ছাড়াও প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে, যা মানবদেহের গঠন ও বৃদ্ধিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পেয়ারা পরিণত হলে কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। টাটকা অবস্থায় পরিপক্ক পেয়ারা থেকে সালাদ, পুডিং প্রভৃতি তৈরি করা যায়। ভিটামিন ‘সি’সহ অন্যান্য পুষ্টিমানের বিবেচনায় আপেল ও কমলার চেয়ে পেয়ারা উৎকৃষ্ট। নিচের ছকে আপেল ও কমলার সাথে পেয়ারার পুষ্টিমান তুলনা করে দেখানো হলো-
তাই পেয়ারা উৎপাদনে যত্নবান হতে হবে এবং এর আহরণ মৌসুম দীর্ঘায়িত করতে সচেষ্ট হতে হবে।
> আরও পড়ুন- পেয়ারা চাষ করে যেভাবে সফল হলো দুই বন্ধু
Advertisement
ব্যবহার: পেয়ারার শিকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ক ফল কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে ভালো কাজ করে। ক্ষত বা ঘাঁয়ে থেতলানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পেয়ারা পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়। পেয়ারায় প্রচুর পেকটিন থাকায় জ্যাম, জেলি তৈরিতে অদ্বিতীয়। তৈরি জেলী সংরক্ষণ করে অমৌসুমে খেয়ে ভিটামিন ‘সি’র অভাব পূরণ করা যায়। শহর ও গ্রামের নারীরা ঘরে বসে পেয়ারার জেলি তৈরী করে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পর বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পেয়ারা থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু শরবত, আচার, আইসক্রিম প্রভৃতি। জাপানে পেয়ারার পাতা থেকে চা তৈরি করা হচ্ছে এবং তা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।
পেয়ারার রোগবালাই: পেয়ারা উৎপাদনের মূল অন্তরায় হচ্ছে পোকামাকড়ের আক্রমণ যা উৎপাদনকে ব্যহত করে। তাই গাছ থেকে শতভাগ উৎপাদন পেতে গাছের ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে বাঁচার উপায় জানা প্রয়োজন। নিচে পেয়ারা গাছের কিছু রোগ, ক্ষতিকর পোকামাকড় এবং তা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বর্ণনা করা হলো-
উইল্ট রোগ: এ রোগের কারণ ছত্রাক। রোগাক্রান্ত গাছের পাতা এবং ডগা উপর থেকে প্রথমে হলুদ হয়ে শুকিয়ে মারা যায় এবং ১০-১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ ঢলে পড়ে। অম্লীয় মাটিতে এ রোগের আক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়।
> আরও পড়ুন- কিউই ফলের বীজ থেকে চারা পাবেন যেভাবে
Advertisement
দমনব্যবস্থা: ক. পেয়ারার বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।খ. মাটিতে ব্রাসিকল প্রয়োগ করে জীবাণুমুক্ত করলে এ রোগের আক্রমণ কিছুটা কমানো যেতে পারে। গ. পলি, আঙুর ও স্ট্রবেরি জাতের পেয়ারার ওপর যে কোন জাত গ্রাফটিং করলে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে দমন সম্ভব।
স্যুটি মোল্ড রোগ: এ রোগের কারণ ছত্রাক। সাধারণত পাতায় এ রোগ হয়ে থাকে। পাতার উপরিভাগ কালো পাউডারি আস্তরণে ঢেকে যাওয়াই হচ্ছে এ রোগের লক্ষণ। সাদামাছি পোকা নিঃসৃত মধুতে ছত্রাক এঁটে যায়। ওই অবস্থায় ছত্রাক কর্তৃক উৎপাদিত প্রচুর কালো স্পোর পত্র পৃষ্ঠে লেগে যায় এবং কালো আস্তরণের সৃষ্টি করে। সবুজ পাতা কালো আবরণে ঢাকা থাকে বিধায় সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। পাতা ক্রমশ শুকিয়ে ঝরে পড়ে এবং গাছ উপর থেকে শুকাতে থাকে।
সাদা মাছি পোকা: ১-২ সে.মি. লম্বা পোকাটি পেয়ারা গাছের পাতায় আক্রমণ করে। পাতার নিচের পিঠে প্যাঁজা তুলার মতো সাদা থোকা থোকা পোকা দেখা যাবে। বয়স্ক ও বাচ্চা পোকা পাতার রস চুষে খায়। গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। চারাগাছে আক্রমণ বেশি হলে গাছ মারাও যেতে পারে। বয়স্ক গাছ আক্রান্ত হলে ফুল ও ফলের সংখ্যা কমে যায়। বয়স্ক পোকা ও নিষ্ফ (বাচ্চা) প্রচুর পরিমাণে মধু নিঃসরণ করে, যার জন্য পাতার ওপর কালো আবরণ পড়ে। একে স্যুটি মোল্ড বলে। এতে গাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। অর্থ্যাৎ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।
দমনব্যবস্থা: প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা সহজেই দমন করা যায়।
মো. শাহীন সরদার/এসইউ/এমএস