অর্থনীতি

নতুন পে-স্কেলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা

বহুল প্রতিক্ষিত অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদনের পর সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা কতোটা আনন্দিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মাধ্যমে বাড়বে তাদের ক্রয়ক্ষমতা। গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা। তাই নতুন এই পে-স্কেলকে যুক্তিযুক্ত মনে করা হলেও এর ফলে দেশের মূল্যষ্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।তারা মনে করছেন, নতুন বেতন স্কেল বৃদ্ধির ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের ক্রমক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তবে একই সঙ্গে বাজারে এর একটা প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেখানে খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি হতে পারে।আবার খাদ্য বহির্ভূত কিছু বিষয় যেমন বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। নতুন পে-স্কেল অনুমোদন সম্পর্কে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন।সোমবার মন্ত্রিপরিষদে অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন হয়। এতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। যোগ করা হয়েছে নতুন একটি উৎসব ভাতা। যার ফলে কর্মকর্তারা বৈশাখী ভাতা হিসেবে পাবেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এটাকে পুঁজি করেই তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। তাতে সাধারণ মানুষের ব্যয় বাড়বে। এখানে শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়লেও বাড়েনি বেসরকারি চাকরিজীবীদের। সবার বেতন বাড়েনি- এই বিষয়টা আমাদের ব্যবসায়ী ও বাড়িওলারা মাথায় নেবে না। তারা সবসময় নিজেদের মত সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়ার চিন্তা করে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।তবে ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্যের দাম অনৈতিকভাবে না বাড়াতে পারেন সেদিকে সরকারের সংশ্লিষ্টদের তদারকি বৃদ্ধির কথা জানান তিনি। সাবেক গভর্নর বলেন, নতুন বেতন কাঠামো চলতি বছরের জুন থেকে বাস্তবায়ন হবে। সরকার এটা অনুমোদন করেছে তা ভালো। তবে তাতে সরকারের ব্যয় বাড়বে। কিন্তু সরকারের আয় বাড়াতে রাজস্ব আহরণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তাই আয় বাড়াতে সরকারকে দক্ষলোক ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর কাজ করতে হবে।সালেহ উদ্দিন আরও বলেন, দক্ষ জনবল তৈরির চেয়ে বেতন বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে সরকার। এতে বোঝা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের খুশি করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো দরকার থাকলেও তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল জনবলকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা।সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় জাগো নিউজকে বলেন, দেশের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, অপর দিকে সরকারের উন্নয়নও হয়েছে। সেই হিসেবে বেতন বাড়ানো যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ। তবে বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি সমান্তরালভাবে দক্ষতা বাড়ানোর উপর জোর দেয়া উচিত।একই সঙ্গে তিনি পাবলিক সার্ভিসেস অ্যাক্ট অনুমোদনের পরামর্শ দেন। কারণ জনসেবা বাড়াতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়ানো, তাদের জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেতন বাড়ার ফলে মূল্যষ্ফীতিতে একটা প্রভাব পড়বে এটা স্বাভাবিক। তবে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না বলে মনে হয়।তিনি বলেন, আমাদের দেশে বেতন বাড়লেই ব্যবসায়ীরা জিনিস-পত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। যখন সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নেয় তখন দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যবসায়ীরা। আমাদের দেশের আইন-কানুন আছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিলে জিনিস-পত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলেও জানান মুস্তাফিজুর রহমান।অর্থনীতিবিদ ড. ইব্রাহীম খালেদ মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতির যে নিম্নমুখী ধারা ছিল, বেতন বৃদ্ধির ফলে তা আর নিম্নমুখী থাকবে না। তবে মূল্যস্ফীতি খুব বেশি বেড়ে যাবে সেটাও না।তবে বেতন কাঠামো বৃদ্ধির ফলে সরকারি বেতন কাঠামোর সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতনের যে বৈষম্য ছিল তা কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।ড. ইব্রাহীম খালেদ বলেন, যেহেতু আমাদের জাতীয় বাজেট অনেক বড়, সেহেতু এটি বাস্তবায়নে খুব একটা অসুবিধা হবে না।এসআই/একে/বিএ

Advertisement