জাতীয়

রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় জাপানের আশ্বাস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’

Advertisement

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হওয়ার পথে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পাশে থাকবে জাপান।’

সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে রোববার বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন এ সব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপান ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় হয়। দু’দেশের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্যের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য জাপানি ব্যবসায়ীদের প্রতি আমি আহ্বান জানিয়েছি। সভায় জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আশ্বাস দেন। আমি তাদের জানাই যে, আড়াইহাজারে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। তারা চাইলে অন্যান্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বা চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরীতে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারেন।’

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৬ সালের পহেলা জুলাই ঢাকার হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ৭ জন জাপানি নাগরিক নিহত হন। নিহত পরিবারের সদস্যরা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আমি স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। তাদের জানাই যে, হলি আর্টিসান ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এ জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালযে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। আমি সেখানে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাগত জানান। এ সময় সুসজ্জিত একটি দল আমাকে গার্ড অব অনার দেয়। একাদশ জাতীয সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় জাপানি প্রধানমন্ত্রী আমাকে অভিনন্দন জানান। তিনি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার প্রতি শূন্য সহনশীর নীতি অনুসরণ করে। এ বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় আমি জাপানের মতো বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করি। জাপান দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের জন্য নতুন একটি অভিবাসন আইন গ্রহণ করেছে। এ আইনের আওতায় নির্দিষ্ট দক্ষ শ্রমিক শ্রেণিতে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি অনুমোদিত উৎস দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানাই। সম্ভাব্য কর্মীদের জন্য জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাপানের সহযোগিতা চাই। জাপানের প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। আমার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ তুলে ধরি। বাস্তবায়নাধীন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাই।’

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে জাপান এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বৎসর পূর্তি উদযাপিত হবে। এ আয়োজনকে সামনে রেখে আমি জাপানের সম্রাট এবং সম্রাজ্ঞীকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাই। এ আমন্ত্রণকে সাধুবাদ জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০২০ সালের প্রথমার্ধে জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানান।’

Advertisement

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে আমার এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (ওডিএ) ঋণ প্যাকেজ স্বাক্ষরিত হয়। ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ চুক্তির প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মেটারবাড়ি পোর্ট উন্নয়ন প্রকল্প (পার্ট-১), ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট উন্নয়ন প্রকল্প (মেট্রো রেল), ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রকল্প (পার্ট-২), এনার্জি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফাইন্যান্সিং প্রকল্প-২ রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপান সফর শেষে আমি সৌদি আরব যাই। সেখানে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে যোগ দিতে আমি ৩১ মে পবিত্র নগরী মক্কায় যাই। পবিত্র শবে কদরের রাত্রিতে মক্কা নগরীতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র, পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ দেড়শ’র মত প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এশিয়ার নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধি হিসেবে আমি সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করি। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বেশকিছু দেশ শান্তি, নিরাপত্ত, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বাইরের হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মানবিক বিপর্যয়সহ নানারকম সমস্যার সম্মুখীন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, ‘ওআইসির চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে মুসলিম উন্মাহর উন্নতি সাধন তথা নির্যাতিত এবং নিপীড়িত মানবতার মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যেভাবে সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছে তা শুধু মুসলিম দেশগুলোর জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত বলে বারবার প্রশংসিত হয়েছে। এ সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে ও দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপসমূহ আমি উপস্থাপন করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পাশাপাশি এ সঙ্কট সমাধানে তাদের আন্তরিক সাহায্য কামনা করেছি। শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে রোহিঙ্গা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের এডহক বৈঠকে রেহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য গাম্বিয়া কর্তৃক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ওআইসির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার জন্য সম্মিলিত তাগিদ আসে। এ ছাড়াও গাম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন এ উদ্যোগে আইনি ও আর্থিক সহযোগিতা যোগানের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আমি আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যে ইসলামোফোরিয়া তৈরি হয়েছে তা দূর করার উপায়, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা, ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা এগিয়ে নেয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক ওআইসি এডেন্ডা ইত্যাদিক বিষয় এবং উপযুক্ত বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা আমি উপস্থাপন করি। এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, প্যালেস্টাইন ও আলকুদস বিষয়ে প্যালেস্টাইনীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি ও অধিকারের বিষয়টি আমি সম্মেলনে তুলে ধরি।’

এমএইচএম/এনডিএস/আরআইপি