জাতীয়

খালেদাকে সাজা দিয়েই আগাম নির্বাচনের হিসাব কষছে আ.লীগ

রাজনীতির চলমান ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে আগাম নির্বাচনের হিসাব কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী আয়োজন নিজেদের অনুকূলে এনে ক্ষমতার সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায় তারা। তবে এর আগে যে কোনো মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মনে করে, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের কোনো বিকল্প ছিল না। আর এমন নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হবে, তা দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম আগেই ধারণা করেছিল। এ কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টিও মাথায় ছিল।সূত্রটি মনে করে, সরকার উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা অনেকটাই আড়াল করতে পেরেছে। অপরদিকে বিরোধীজোটের আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচন দিলে ফলাফল সরকারের ঘরেই উঠবে। তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আগাম নির্বাচনের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল চাইলেই আগাম নির্বাচন হতে পারে না।’আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো বিশেষ গতি পেয়েছে। বিএনপির লাগাতার অবরোধ চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রলবামা মেরে মানুষ হত্যার ঘটনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা আলোচিত গ্যাটকো মামলারও অভিযোগপত্র সম্প্রতি দেয়া হয়েছে।বিশেষ আদালত গঠন করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারকার্যও নিষ্পত্তির পথে। তবে কৌশলগত অবস্থান নিয়ে সরকার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।‘এতিমের টাকা আত্মসাত করেছে বিএনপি নেত্রী’বিষয়টি আদালতে প্রমাণ হলে এমন স্পর্শকাতর ইস্যু দাঁড় করিয়ে সরকার জনসমর্থন নিজের পক্ষে নিতে চেষ্টা করবে। হরতাল-অবরোধে হত্যা, জ্বালাও- পোড়াও মামলাগুলোতেও খালেদা জিয়াকে কোণঠাসা করার ফন্দি এঁটেছে সরকার। মামলার জালে আটকাপড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়েও সরকার বিশেষ কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। ২১ আগস্ট আলোচিত গ্রেনেড হামলায় সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভুক্তি করায় মামলাটি নতুন মোড় নেয়।বিশেষ মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা দিয়েই তারেক রহমানের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাইছে সরকার।খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের পাশাপাশি দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদেরও চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। শীর্ষ নেতাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জেলহাজতেই রয়েছেন।দলের শীর্ষ নেতাদের এভাবে মামলায় জড়ানোর ঘটনায় বিএনপির সর্বত্রই আতঙ্ক এবং হতাশা কাজ করছে। দলের নেতারা বারবার মামলা নিয়ে সরকারের অবস্থানের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করছেন।সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আগাম নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘সরকার নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের চাপে রয়েছে।’ তবে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এবং সরকারের অবস্থান নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে পারে। তবে এটা গুজব হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।নির্বাচল হলে সেখানে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান দুদু।খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে নির্বাচনের বাহিরে রাখা হবে কি না, এরকম প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ১/১১ থেকেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।তিনি বলেন, সাজানো নির্বাচন সরকার আগেও করেছে, এবারও নির্বাচন হলে হয়তো তাই করবে। তবে সরকারের এরকম দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ উদার গণতান্ত্রিক দেশ। দেশের মানুষ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আগাম নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, ‘বিএনপির ভুল আগাম নির্বাচন দিয়ে শুধরানোর কোনো সুযোগ নেই। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে, আগাম নির্বাচন দিতে সরকার প্রস্তুত। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই নির্ধারিত সময়েই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’‘বিএনপি নেতাদের মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার আদালতের। এর সঙ্গে সরকার বা আগাম নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি নিজেদের হতাশা থেকে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছে’-যোগ করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এএসএস/এমএম/একে/আরআইপি

Advertisement