খেলাধুলা

বোলারদের এক হাত নেয়ার আগে একটু থামুন

সমালোচকরা অনেক তীর্যক কথা বলবেন, নানা রকম নেতিবাচক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুঝে না বুঝে আমজনতারা মাশরাফি, সাকিব, মোস্তাফিজ, সাঈফউদ্দিন আর মিরাজের গোষ্ঠি উদ্ধার করবেন। হয়ত ইতোমধ্যে বলাবলি শুরুও হয়ে গেছে।

Advertisement

এটা সত্যি বাংলাদেশের বোলিং আজ (শনিবার) ভাল হয়নি। একজন বোলারও এমন বোলিং করতে পারেননি, যা প্রশংসা করা যায়। মোদ্দা কথা টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার যথার্থতা আর যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান না দিলেই নয়।

সেটা দেখার ও জানার পর হয়ত মাশরাফি, সাকিব, মোস্তাফিজ, সাঈফউদ্দীন ও মিরাজের ওপর ঝাল ঝড়ানো কমতেও পারে। আপনারা কি জানেন, আজকের ৩৮৬ সহ ইংল্যান্ড সর্বশেষ ৭ খেলায় ৩০০+ রানের নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়া দল।

আসুন পিছন ফিরে তাকাই। এই ইংল্যান্ড ঠিক আগের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ১৪ রানে হারলেও, ৩৪৮ রানের পাহাড় সমান স্কোরের জবাবে করেছিল ৩৩৪। তার আগে এবারের বিশ্বকাপ যাত্রার প্রথম দিন দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ৩১১ রানের বড় সড় স্কোর গড়ে জিতেছিল ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে।

Advertisement

তার আগে ১১ মে থেকে ১৯ মে- এই ৯ দিনে পাকিস্তানের সঙ্গে চার ওয়ানডের সবকটায় হয় আগে না হয় পরে ব্যাট করে ৩০০+ রান তুলেছিলেন এই জেসন রয়, বেয়ারস্টো, বাটলার আর মরগ্যানরা।

১১ মে সাউদাম্পটনে প্রথম ম্যাচে ৩৭৩ রানের পাহাড় সমান স্কোর গড়ে ১২ রানের জয়। তার পরের খেলায় ব্রিস্টলে পাকিস্তানে করা ৩৫৮ রানের আকাশ ছোঁয়া টার্গেট ৬ উইকেট হাতে রেখে ৩১ বল আগে টপকে অবিস্মরণীয় জয়ের স্বাদ নেয়া।

তার পরের ম্যাচে নটিংহ্যামে পাকিস্তানের ৩৪০ রান তাড়া করে তিন বল আগে তিন উইকেট অক্ষত রেখে লক্ষ্যে পৌছে যাওয়া। এরপর ১৯ মে লিডসে পাকিস্তানের সাথে ৩৫১ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ৫৪ রানের জয়ের রেকর্ড। এই টানা এতগুলো ম্যাচে যে দলের ব্যাটসম্যানরা ৩০০-৩৫০ আবার কখনো সাড়ে তিনশো’র বেশি রান করে দেখিয়েছে, তারা আজ প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৮০’র ঘরে পা রেখেছে- এটা কি খুব বেশি?

এমন নয় যে, এর আগে এত রান কেউ কখনো করেনি, করেছে। এই ইংল্যান্ডেরই ওয়ানডেতে চার চারবার ৪০০+ স্কোর আছে। কাজেই জেসন রয়, বেয়ারস্টো, বাটলার ও মরগ্যানদের আজ ৩৮৬ করাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাদের সামর্থ্য আছে নিজেদের দিনে বিশ্বের যেকোন বোলিং শক্তির বিপক্ষে সাড়ে তিনশো’র বেশি রান করার।

Advertisement

এটা গেল টিম পারফরমেন্সের কথা। এবার আসুন দেখা যাক নিকট অতীতে বা সম্প্রতি ইংল্যান্ডের শীর্ষ উইলোবাজদের পরিসংখ্যান। আজ যিনি ১২৬.৪৪ স্ট্রাইকরেটে ১২১ বলে ১৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে টাইগারদের বোলিং-ফিল্ডিংকে এলোমেলো করে দিয়েছেন, সেই জেসন রয় এই সেদিন পাকিস্তানের সাথে চার ওয়ানডের তিন ম্যাচে এক সেঞ্চুরি সহ করেছেন ৮৭, ৭৬ ও ১১৪। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে ৩২ রানে আউট হলেও আফগানদের সাথে শেষ গা গরমের ম্যাচে নট আউট ছিলেন ৮৯ রানে।

আর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ৮ রানে আউট হওয়া জেসন রয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও হাফ সেঞ্চুরি (৫৪) করেছিলেন। আজ টাইগারদের বিপক্ষে ৫১ করা আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টোও পাকিস্তানের সাথে একটি করে সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরি সহ (৫১, ১২৮ আর ৩২) তিন ম্যাচেই রান পেয়েছেন।।

বিশ্বকাপে আগের দুই ম্যাচে অবশ্য রান নেই বেয়ারস্টোর (পাকিস্তানের সঙ্গে ৩২ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ০)। জো রুট পাকিস্তানের বিপক্ষে এই কার্ডিফে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে করেছিলেন ৪৭। তারপর ওয়ানডে সিরিজে ৪০, ৪৩, ৩৬ ও ৮৪। বিশ্বকাপেও রান বন্যায় ভাসাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫১ এবং পাকিস্তানের সাথে সেঞ্চুরি (১০৭)।

বাটলারও পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচে রানেই ছিলেন (১১০*, ৩৪ ও ৫২)। আর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সাথে হারা ম্যাচেও সেঞ্চুরি (১০৩) আছে তার। ইয়ন মরগ্যান পাকিস্তানের সাথে তিন ম্যাচে করেছিলেন ৭১*, ১৭* ও ৭৬।আর এ ম্যাচে ৩৬ করা মরগ্যান বিশ্বকাপের আগের দুই ম্যাচের একটিতে ( দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫৭) করেছেন হাফ সেঞ্চুুরি।

অর্থাৎ ইংল্যান্ডের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে মরগ্যান ছাড়া জেসন রয়, বেয়ারস্টো, জো রুট আর বাটলার- সবাই গত ৫-৭ খেলায় সেঞ্চুরি করেছেন। তার মানে তারা সবাই রানে আছেন। এমন এক ব্যাটিং শক্তিকে আসলে দেশের মাটিতে সাড়ে তিনশোর নিচে আটকে রাখাও কঠিন।

পাকিস্তানিরা খাবি খেয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক জোরে বল করা হাসান আলিরাও হালে পানি পাননি। সেখানে ১১৭-১১৮ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতির বোলিং নিয়ে ইংলিশদের আটকে রাখা খুব কঠিন। তারপরও কিছু কথা থেকেই যায়। কিছু প্রশ্নও উকি ঝুঁকি দিল।

আগের দু’দিন কভারে ঢাকা পিচে অধিনায়ক মাশরাফি টস জিতে ব্যাটিং না করে বোলিং বেছে নিলেন। উইকেটে কিছু ঘাসও ছিল। সব মিলে পেসবান্ধব কন্ডিশন। কোথায় দুই ডান হাতি ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় আর বেয়ারস্টোর বিপক্ষে এক দিকে বাঁহাতি মোস্তাফিজ আর অন্যদিকে মাশরাফি বোলিংয়ের সূচনা করবেন, তা না প্রথম ওভার করলেন সাকিব আল হাসান। টস জিতে পেস বোলিং সহায় পিচে স্পিন দিয়ে শুরুই জন্ম দিল বড়সড় প্রশ্নের।

তারপর সাকিবকে এক টানা ৬ ওভার করানো হলো। মাঝে এনে আরও দুই ওভার শেষ করা হলো। সেটাও কেন? কি কারণে? বোঝা গেল না। একজন বোলার এতটুকু সমীহ জাগাতে পারেননি। কারো বলে পেস নেই, সুইংও নেই। নির্বিষ পেস আক্রমণ। সাকিব-মিরাজ বল ঘোরাতে না পারলেও কখনো কখনো ভাল জায়গায় বল ফেলে একটু আধটু সমীহ আদায় করে নিয়েছেন, এর বেশী কিছু নয়।

সাথে ফিল্ডিং হলো যাচ্ছেতাই। সবাই যেন পাল্লা দিয়ে বাজে ফিল্ডিং করলেন। এক রানের জায়গায় ডাবল হলো বেশ কয়েকবার। এক রানও হয়না- এমন পরিস্থিতিতে এর ওর হাত গলে বল বেড়িয়েও গেল। সব মিলে ভক্ত ও সমর্থকদের জন্য হতাশার এক সেশন।

এআরবি/এসএএস