সরকারি অর্থের দক্ষ ব্যবস্থাপনাসহ ঋণের স্থিতি নিম্ন পর্যায়ে রাখা, সুদ বাবদ ব্যয় কমানো এবং তারল্য প্রবাহের ধারাবাহিকতা রক্ষায় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এর অধীনে বস্তবায়িত প্রকল্পে অর্থছাড় পদ্ধতিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এর অধীনে বাস্তবায়িত প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের প্রথম তিন কিস্তির (প্রথম নয় মাসের) অর্থ বছরের শুরুতেই অর্থছাড় করিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে রেখে নিজেদের মতো করে খরচ করতো প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু আগামী জুলাই থেকে প্রতি মাসে হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ট্রেজারি একক হিসাব থেকে অর্থ সরাসরি প্রাপকের হিসেবে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবে। একইসঙ্গে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতি তিন মাস অন্তর উত্তোলনযোগ্য হবে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি সরকারি চিঠি হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর হতে অর্থছাড়ের নতুন পদ্ধতি প্রয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
Advertisement
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপে স্বাক্ষর করেছেন। সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে বাজেটে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এর অধীন বাস্তবায়িত প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ বিধিবিধান পালন সাপেক্ষে ৪টি কিস্তিতে ছাড়া হয়।
প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (সিএও) এর কার্যালয় পোস্ট অডিট এর শর্তে সংযুক্ত তহবিল থেকে বছরের শুরুতেই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং এর অধীন বাস্তবায়িত প্রকল্পের অনুকূলে প্রথম তিন কিস্তির চেক ইস্যু করে অগ্রিম হিসেবে অর্থ পরিশোধ করে। এতে সরকারি অর্থ ট্রেজারি একক হিসাব থেকে স্থানান্তরিত হয়ে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
ফলে সরকারের নগদ ব্যবস্থাপনায় তুলনামূলক চাপ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সরকারের যখন নগদ অর্থের প্রয়োজন হয় তখন ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য উৎস থেকে সুদ পরিশোধের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। গত চার অর্থবছরে এ বাবদ গড়ে প্রতি অর্থবছরে ঋণ হিসেবে ১১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা নেয় সরকার। এতে সুদ বাবদ প্রতি অর্থবছরে ৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এর অধীন বাস্তবায়িত প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ছাড়ের সংস্কার করা হলে এই ঋণ ও সুদ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব।
Advertisement
অর্থছাড়ের নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তার নিয়ন্ত্রণাধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব খাতের অংশের বাজেট অর্থনৈতিক কোডভিত্তিক বিস্তারিতভাবে প্রণয়ণ করবে। এই বাজেটের অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতি তিন মাস অন্তর উত্তোলনযোগ্য হবে। এতে কোনো আদেশ জারির প্রয়োজন হবে না।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জিওবি অংশের বরাদ্দের অর্থের পুরোটাই ট্রেজারি একক হিসেবে জমা থাকবে। এতে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন উৎস হতে ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। একইসঙ্গে ঋণের সুদ খাতে ব্যয় হ্রাস পাবে।
সকল ক্যাশ একটি একক প্ল্যাটফর্মে অর্থাৎ ট্রেজারি একক হিসাবে থাকার কারণে অপ্রত্যাশিত পেমেন্ট মোকাবিলায় রিজার্ভ নিম্ন লেভেলের হলেও সমস্যা হবে না।
ঋণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ দক্ষতার সঙ্গে বিনিয়োগ এবং ডেট সার্ভিসিং কস্ট ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
ট্রেজারি একক হিসাব থেকে অর্থ সরাসরি প্রাপকের হিসাবে ইএফটি-এর মাধ্যমে জমা হওয়ায় সরকারের পেমেন্ট সময়মতো ও স্বল্প খরচে সঠিব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যাবে এবং অপারেশনাল ঝুঁকিও হ্রাস পাবে।
এমইউএইচ/এসএইচএস/এমকেএইচ