জাতীয়

দিনে ছাপবে ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট, ছাপা হবে এমআরপিও

আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাধুনিক ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এদিন থেকে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ পাসপোর্ট হাতে পাবেন বাংলাদেশের নাগরিকেরা। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি প্রক্রিয়ায় ই-পাসপোর্ট প্রকল্পে ধীরগতি দেখা দিলেও এবার যেকোনো মূল্যে ই-পাসপোর্ট শুরু করতে আটঘাট বেঁধে নেমেছে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

Advertisement

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ শুধুমাত্র ভিভিআইপি-ভিআইপিদের দেয়া হবে ই-পাসপোর্ট। এরপর পরবর্তী ধাপে আবেদন করবেন সাধারণ নাগরিকরা। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে অধিদফতর। প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশের সব নাগরিক আবেদনের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে ই-পাসপোর্ট।

১ জুলাই উদ্বোধনের কয়েকমাসের মধ্যেই দিনে মোট ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট প্রিন্ট করতে সক্ষম হবে অধিদফতর।

ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। আমরা ফ্যাক্টরি তৈরির কাজ করছি। প্রথমদিন থেকেই সবাই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে ই-পাসপোর্টের ফি’র প্রস্তাব গিয়েছে। তারা ফি নির্ধারণ করবে। উদ্বোধনের পর ফুল সেটআপের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে। পুরোপুরি প্রস্তুত হলে দিনে ২৫ হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব হবে।’

Advertisement

এদিকে এমআরপি পাসপোর্টধারী অনেকেই শঙ্কায় রয়েছেন ই-পাসপোর্ট আসলে তাদেরটা পরিবর্তন করতে পারবেন কি-না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদফতরের একজন পরিচালক বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট আসলেও এমআরপি সচল থাকবে। শুধু তাই নয় কেউ যদি এমআরপি করতে চায়, তাহলে সে ই-পাসপোর্ট না নিয়ে এমআরপি’র জন্য আবেদন করতে পারবে। এটা একান্তই নাগরিকদের ইচ্ছা।’

এদিকে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখনো এর ফি চূড়ান্ত করা হয়নি। এজন্য অধিদফতরের সবাই এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে জানা গেছে, ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ন্যূনতম ৬ হাজার হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ৬ হাজার টাকা দিলে একজন নাগরিক ২১ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাবেন। এছাড়াও ৭ দিনের এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার এবং ১ দিনের সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর (মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মতো) চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয়ের সত্যতা থাকে। ই-পাসপোর্টে মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি ও পরিচয় গোপন করার কাজ কঠিন হবে বলে দাবি করছে অধিদফতর। পৃথিবীর ১১৯টি দেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করেন।

Advertisement

২০১৮ সালের জুলাই মাসে অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের চুক্তি করেন। এরপর ডিসেম্বর মাসে পাসপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনে অধিদফতর। নির্বাচনের আগ দিয়ে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও কমার্শিয়াল ইমপর্টেন্ট পারসনকে (সিআইপি) ই-পাসপোর্ট দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা ছিল। সর্বসাধারণকে জানুয়ারিতে পাসপোর্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে দশ আঙুলের ছাপ থাকার কথা। তবে চুক্তি সাক্ষরের পর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি মাত্র দু'টি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে। ‘মাত্র ২ আঙুলের ছাপে ভবিষ্যতে জালিয়াতি হতে পারে’, তাই এ প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না পাসপোর্ট অধিদফতর। এ নিয়ে জার্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। এটাও ই-পাসপোর্টের বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ।

এ বিষয়ে পিডি সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘১ জুলাই ই-পাসপোর্ট আসছে। এ নিয়ে নিয়ে আর কোনো জটিলতা নেই।’

ইতোমধ্যে উত্তরায় কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ওই কারখানা থেকে ছাপানো হবে ই-পাসপোর্ট।

এআর/এসএইচএস/এমকেএইচ