দেশজুড়ে

চিকিৎসক হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করলেন আশরাফুল

‘আর আট-দশজনের মতো আমার শৈশব কাটেনি। অভাব-অনটনের মধ্যে আমার বেড়ে ওঠা। বাবা কী জিনিস বুঝে ওঠার আগেই মাত্র আড়াই বছর বয়সে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যান। বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু হাল ছাড়িনি। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ডাক্তার হব। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তবে কষ্ট হয়েছে অনেক। আল্লাহ আমার মনের আশা পূরণ করেছেন। সকল অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার মা। আমার মা আমার কাছে সব।’

Advertisement

কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী গ্রামের মৃত শমসের রহমান গাজীর ছেলে ডা. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বগুড়া টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ থেকে তিন মাস আগে এমবিবিএস শেষ করেছেন। বর্তমানে সেখানেই ইন্টার্নি চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ডা. আশরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যখনই ছুটিতে বাড়িতে যাই তখনই গ্রামের অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেই। এবারও ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী ৪০ জন অসহায় মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা দিয়েছি। বলেছি আমার মা ও মৃত বাবার জন্য দোয়া করতে। এছাড়া আমার কিছু চাওয়ার নেই।

তিনি আরও বলেন, আমি ভালো চিকিৎসক হওয়ার আগে একজন ভালো মানুষ হতে চাই। সব সময় চেষ্টা করবো অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে। আমি আমার এলাকায় মানুষের জন্য আজীবন ফ্রি সেবা দিতে চাই। ভবিষ্যতে একজন শৈল্য চিকিৎসক হতে চাই।

Advertisement

ডা. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তির সুযোগ না পেয়ে চেষ্টা শুরু করি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির। তখন টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলাম না। কেউ সহযোগিতা করেনি বরং কটু কথা শুনিয়েছে। এরপর আমার বড় মামা অধ্যাপক আবদুল খালেক আমাকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির টাকা দিয়ে সুযোগ করে দেন। এরপর থেকে অসহায় পরিবারের ছেলে হয়ে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আমার চিকিৎসক হয়ে ওঠা। পরিবারের যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন সকলের কাছে আমি চির ঋণী।

ডা. আশরাফুল ইসলামের মা রহিমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ছেলে যখন বাড়িতে আসে তখন এলাকার বিভিন্ন মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে বাড়িতে। অনেকে টাকা দিতে চায় আমি তাদের বলি- আমার ছেলে ফ্রি চিকিৎসা দেয় টাকা নেয় না। অনেকে বলে আশরাফুলের দেয়া ওষুধ খেয়ে আমি সুস্থ হয়ে গেছি। তখন গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়। আমার আল্লাহর কাছে আর কিছু চাওয়া নেই। আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে আশরাফুল।

স্থানীয় তারালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট জাগো নিউজকে বলেন, বজ্রপাতে ছেলেটির বাবা মারা যায়। এরপর অসহায় হয়ে পড়ে তার পরিবার। অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে এখন ডাক্তার হয়েছে আশরাফুল। ছুটিতে বাড়িতে আসলে এলাকার মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়। সবাই আশরাফুলকে ভালোবাসে।

আকরামুল ইসলাম/আরএআর/এমকেএইচ

Advertisement