বিশ্বকাপের শুরুটা দুর্দান্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে জানান দিয়েছে নিজেদের সামর্থ্যের কথা। যা চলমান ছিলো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও। তবে সে ম্যাচে অল্পের জন্য জিততে পারেনি মাশরাফি বাহিনী।
Advertisement
অনেকেরই বিশ্বাস, কিউইদের বিপক্ষে বাড়তি একটা পেসার তথা রুবেল হোসেন একাদশে থাকলে চিত্রনাট্য ভিন্ন হতে পারত ম্যাচের। তাই বড় একটা অংশ চাচ্ছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচে যেনো একাদশে রাখা হয় গতিতারকা রুবেলকে।
তবে এমনটা মানতে নারাজ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস। তিনি মনে করেন অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই নামা উচিৎ টাইগারদের। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এ সাবেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইংল্যান্ডের এ বিশ্বকাপে থাকতে পারতেন দলের সঙ্গেই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে উত্থান ঘটে সাকিব, তামিম ও মুশফিকের। সে বিশ্বকাপে হাবিবুল বাশার সুমনের ডেপুটি ছিলেন নাফীস।
Advertisement
কিন্তু ফর্মের পরতির কারণে বেশিদিন জায়গা ধরে রাখতে পারেননি দলে। যে কারণে অনেকদিন ধরেই জাতীয় দলের বাইরে নাফীস। বিশ্বকাপে মাশরাফি-সাকিবরা যখন মাঠে খেলছেন, তখন নাফীস বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন তাদের পারফরম্যান্স।
জনপ্রিয় ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে দেয়া বিশেষজ্ঞ মতামতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এখনো আগের ম্যাচের একাদশ নিয়েই নামার পরামর্শ দেবো। দেখুন, আমাদের বেঞ্চে এখন লিটন-রুবেলের মতো খেলোয়াড়রা আছে। যারা নিয়মিত প্রথম একাদশে খেলার দাবি রাখে। তবে এখন আমাদের ব্যাটিং লাইনআপ পারফেক্ট। তারা ভালো করছে।’
নাফীস আরও ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আর আপনি যদি একাদশে রুবেল হোসেনকে আনেন, তাহলে আমি মনে করি সেটা হবে ইংল্যান্ডের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলা। আপনি নিশ্চয়ই তা চাইবেন না। তাই আমি মনে করি অপরিবর্তি একাদশ নিয়েই খেলা উচিৎ।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ লড়াই, বিশ্বকাপের সামনের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশকে আরও সাহস যোগাবে বলে মনে করেন নাফীস।
Advertisement
‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। প্রায় শূন্য থেকে ম্যাচ জেতার অবস্থায় চলে গিয়েছিল তারা। কারণ তারা খুব বেশি রান করতে পারেনি। পরে নিউজিল্যান্ড সহজ জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। বেশ কিছু উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলে। সে ম্যাচ হারলেও অনেক ইতিবাচক দিক ছিল। আশা করি, গত ম্যাচগুলোর আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো একটি ম্যাচ খেলবে তারা।’
এসময় তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের জুটির প্রশংসায় নাফীস বলেন, ‘সৌম্য এবং তামিমের জুটিটা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দুই ম্যাচেই তাদের শুরুটা ভালো হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশি সমর্থক হিসেবে আপনি চাইবেন তারা যত বেশি সম্ভব উইকেটে থাকতে পারে। বর্তমান সময়ে সৌম্যকে বেশি স্বচ্ছন্দ্য মনে হয়, যে কিনা শট খেলতে ভালোবাসে।’
তবে তামিমের আড়ষ্ট ও খোলসবন্দী ব্যাটিংয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন নাফীস। তিনি চান তামিম যেন নিজের মতোই ব্যাটিং করে। তাই বলেন, ‘তামিমের বড় ইনিংস খেলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সে বড় ইনিংস খেললে বেশিরভাগ সময়ই জয় পায় বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে আমার মনে হয় সে খানিক খোলসে বন্দী। হ্যাঁ, গত কয়েকবছরে তার দায়িত্ব বদলেছে অনেক। কারণ দল চায় তামিম যাতে লম্বা সময় ব্যাটিং করে। আমিও চাই, সে লম্বাসময় উইকেটে থাকুক। তবে আমি চাই সে যেন নিজের মতো করেই ব্যাটিং করে।’
প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দল ভালো করলেও, নিজের সেরা স্বাভাবিক বোলিংটাও করতে পারেননি দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দুই ম্যাচের ২০ ওভারের মধ্যে তিনি হাত ঘুরিয়েছেন মাত্র ১১ ওভার, রান খরচ করেছেন ওভারপ্রতি সাড়ে সাত করে। যা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের জন্য।
এ সমস্যার সমাধানে দারুণ এক পরামর্শ দিয়েছেন নাফীস। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, মাশরাফি এখনো দারুণ বোলার। তবে গত কয়েক ম্যাচে সে নিজেকে যেভাবে ব্যবহার করছে, তাতে খানিক সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ গত ১০-১৫ বছরে বেশিরভাগ সময়েই সে নতুন বলে বোলিং করেছে। তার এখন আর সে গতি নেই। কিন্তু সিম মুভমেন্ট এবং ভালো জায়গায় বল করার সামর্থ্য রয়েছে।’
‘কিন্তু গত কয়েক ম্যাচে মোস্তাফিজ তার সেরা ছন্দে ফেরায় টিম ম্যানেজম্যান্ট হয়তো দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে তারা নতুন বল কাকে দেবে। যেহেতু মাঝের ওভারে মাশরাফি নিজের সুইং বা কাট পাবে না পিচ থেকে, তাই আমি মনে করি মোস্তাদিজের সঙ্গে তারই নতুন বলে বোলিং করা উচিৎ। কারণ মাশরাফি যখন সুইং পায়, তখন সে নিজের সেরা ছন্দে চলে যায়। সে যদি নতুন বলে বোলিং শুরু করে তাহলে নিজের কোটা পূরণ করতে পারবে এবং নিজের সেরাটাও দিতে পারবে-’ আরও বলেন নাফীস।
এসএএস