খেলাধুলা

এটা একদমই নতুন ম্যাচ, প্রথম বল থেকেই সব শুরু করতে হবে : মাশরাফি

‘আরে, ইংল্যান্ড এখন যত ভালো দল আর কঠিন প্রতিপক্ষই হয়ে উঠুক না কেন, কঠিন সত্য হলো, গত দুই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাথে পারেনি। সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একটি মাত্র বড় শক্তিকেই হারিয়েছে, সেটা হলো ইংল্যান্ড। কাজেই ভেন্যু কার্ডিফ যেমন বাংলাদেশের পয়োমন্ত, একইভাবে টিম ইংল্যান্ডও বাংলাদেশের প্রিয়’-এমন কথা অনেক বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকের মুখে মুখে।

Advertisement

এমন কি আজ (শুক্রবার) ইংল্যান্ডের হয়ে ম্যাচের আগের প্রেস কনফারেন্সে আসা অধিনায়ক ইয়ন মরগানকেও অতীতের ম্যাচগুলো প্রশ্ন শুনতে হলো। বলা হলো, তোমরা তো গত দুই বিশ্বকাপ ধরে বাংলাদেশের সাথে পারো না। তোমাদের পেলেই বাংলাদেশ তেঁতে ওঠে।

একই প্রশ্ন উঠলো বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রেস কনফারেন্সেও। এক ইংলিশ সাংবাদিক বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, আপনারা তো ইংল্যান্ডকে গত দুই বিশ্বকাপে হারিয়েছেন। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে জেতার পর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডেও ইংলিশদের সাথে জিতেছিলেন। এই যে আপনারা পর পর দুই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে আছেন, আগামীকালও কি জিততে চাচ্ছেন? মানে ইংলিশদের বিপক্ষে 'হ্যাটট্রিক' জয়ের চিন্তা করছেন? আর আপনাদের কাছে পর পর দুই বিশ্বকাপে হেরে ইংলিশরা কি মনের দিক থেকে একটু দুর্বল থাকবে? তাদের ওপর কি একটা বড় চাপ আছে?’

ঐ ইংরেজ সাংবাদিকের প্রশ্নটাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সারা ক্রিকেট বিশ্বে। সাত সমুদ্র তোরো নদীর ওপারে থেকেও বোঝা যায়, বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের বড় অংশ আগের দুই ম্যাচের ফল নিয়ে অনেক বেশি আবেগতাড়িত। এবং ঐ দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের বিষয়টি কম বেশি সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

Advertisement

২০১১ সালের মার্চে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২ উইকেটের আর ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে ১৫ রানের জয়ের প্রসঙ্গটি কালকের ম্যাচের আগে বারবার চলে আসছে।

নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, বাংলাদেশ দল ঐ দুই ম্যাচ নিয়ে আসলে কি ভাবছে? টাইগারদের ভাবনায় আগের দুই বিশ্বকাপে টানা ইংলিশদের হারানোর স্মৃতি কতটা সজীব আছে? তারা কি এখনো ঐ দুই ম্যাচের সুখস্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন?

আগামীকাল ৮ জুন শনিবার সাফল্যের পয়োমন্ত ভেন্যু কার্ডিফে মাঠে নামার আগে অধিনায়ক মাশরাফির ঐ দুই ম্যাচ, তার পারফরমেন্স আর ফল নিয়ে ভাবনাটাই বা কি?

যারা ধরেই বসে আছেন, টাইগাররা ঐ দুই জয়কে বড় দাওয়াই ভেবে খুশি মনে মাঠে নামবে, তারা একটু কষ্ট পাবেন। চরম বাস্তববাদী অধিনায়ক মাশরাফির চিন্তা-ভাবনায় ঐ দুই জয় নেই বললেই চলে।

Advertisement

সব সময় প্রতিটি বিষয়ে যাকে আবেগ টানে না, যিনি অতীতমুখো নন, সব সময় বর্তমান এবং বাস্তবকেন্দ্রিক চিন্তা করেন-সেই মাশরাফির ঐ দুই ম্যাচ জয়ের স্মৃতি মনে আছে। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক তা নিয়ে পড়ে থাকতে রাজি নন।

তার উপলব্ধি ও সোজা সাপটা উচ্চারণ, ‘দেখেন আমরা আগের দুই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে জিতেছি, ইংলিশরা আমাদের সাথে পারেনি। এটা যেমন সত্য, আবার কাল যে ম্যাচটি হবে সেখানে ঐ দুই খেলার এবং জয়ের প্রভাব ফেলার সম্ভাবনাও কম। কারণ সে দুই খেলা এখন অতীত। যার অস্তিত্ব আছে মূলত ইতিহাস ও পরিসংখ্যানে। সেটা নিয়ে পড়ে থাকলে তো আর চলবেনা। এবারের বিশ্বকাপ একটি নতুন আসর। কাল আমরা ইংল্যান্ডের সাথে যে ম্যাচটি খেলতে নামবো, সেটাও একদম নতুন খেলা।’

মাশরাফি যোগ করেন, ‘এমন তো নয়, আগের ম্যাচ যেখানে শেষ হয়েছিল, কালকের ম্যাচ ঠিক সেখান থেকেই শুরু হবে। তা হবে না। একদম নতুন দিন, নতুন আসর আর ভিন্ন ম্যাচ। প্রথম বল থেকে সবই নতুন। কাজেই আগের দুই জয় নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না।’

এটুকু শুনে আবার ভাববেন না, আগের দুই বিশ্বকাপে ইংলিশদের হারানোর কোনই মূল্য দিচ্ছেন না মাশরাফি। দিচ্ছেন। মানছেন, তাদের স্মৃতিতে ঐ দুই ম্যাচ জয়ের সুখস্মৃতি এখনো জাগরুক। সেটা মনের জোর বাড়াতে পারে। মনকে চাঙ্গা রাখতে পারে। মাশরাফি বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস তো অবশ্যই দেবে। আমরা ইংলিশদের হারাতে পারি। আগে হারিয়েছি। এটা একটা অনুপ্রেরণা। তবে আসল কাজ হলো ম্যাচে জায়গামত করণীয়গুলো ঠিক মত করা। আগে পেরেছি বলেই কালও পারবো, এভাবে ভাবার কিছু নেই। আমাদের কাজ হলো সময়মত পারফর্ম করা। যখন যা দরকার, তা ভালো ভাবে করতে পারা। সেটা করার কথাই ভাবছি।’

এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ