দেশজুড়ে

সুস্থ শিশু জন্ম দিয়েছেন সিলেটের ৪৮ এইডস আক্রান্ত মা

সিলেটে গত কয়েক বছরে এইচআইভি এইডস পজেটিভ ৪৮ গর্ভবতী নারী ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিয়ে এইচআইভি এইডস ভাইরাসমুক্ত ৫০ শিশুর জন্ম দিয়েছেন। এই মায়েরা বুকের দুধও পান করিয়েছেন তাদের নবজাতক সন্তানদের। জন্ম নেয়া সব শিশুই এখন সুস্থ আছে।

Advertisement

জানা গেছে, এইডস আক্রান্ত মায়েদের সন্তান যেন এইডস নিয়ে জন্ম না নেয় সে লক্ষ্যে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইডস, এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় পিএমটিসিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রোগ্রামের অধীনে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের চার জেলায় এইচআইভি আক্রান্ত ৪৮ জন প্রসূতি মা ৫০ জন সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। বর্তমানে ৫১ জন নারী গর্ভাবস্থায় রয়েছেন। গত দেড়যুগে সিলেটে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৭ শিশু ও ৬৮ নারীর। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন ৪৮ শিশু ও ২৩২ জন নারী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি সনাক্ত করে ভাইরোলজি বিভাগ। ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত এদেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। একই বছর থেকে ইউনিসেফের সহায়তায় ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়। পিএমটিসিটি প্রোগ্রামের সঙ্গে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকবছর আগে চালু হয়েছে এআরটি সেন্টার।

Advertisement

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইডস রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়ার পাশাপাশি করানো হয় এইচআইভি পরীক্ষা। রয়েছে নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও। গত ৯ এপ্রিল মৌলভীবাজারে একটি সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে। যেখানে বর্তমানে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার ১১০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন।

এদিকে এইচআইভি এইডস নিয়ে গত দেড় যুগ ধরে কাজ করছে ‘আশার আলো সোসাইটি’ নামের একটি এনজিও সংস্থা। আরো অনেক এনজিও সংস্থা সিলেটে এইডস নিয়ে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এইচআইভি আক্রান্ত মায়েরাও সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারছেন। কারণ এখন ওষুধ বের হয়েছে। যখনই মায়ের শরীরে এইচআইভি সনাক্ত হয়, তখনই মাকে সেই ওষুধ দেয়া হয়। এতে করে বাচ্চা সুস্থ থাকে। বাচ্চাটির যেন এইচআইভি না হয় সেজন্য বাচ্চাকেও এন্টি ভাইরাস ইনজেকশন দিতে হয়।

তারা আরও জানান, এইডস আক্রান্ত মাও চাইলে সন্তান জন্ম দিতে পারেন। তবে সেজন্য কিছু ওষুধ আছে। এইচআইভি পজিটিভ বা এইডস আক্রান্ত মা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে কিনা এটা নিয়ে অনেক রকম মত রয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে, বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। না খাওয়ালে শিশু ডায়রিয়া, পুষ্টিহীনতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। তবে মায়ের বুকে যেন কোনো ক্ষত না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তথ্য মতে সিলেটের ৪টি বিভাগে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৯৩০ জন এইচআইভি এইডস পজেটিভ রয়েছেন। গত একবছরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৭১ জন।

তথ্য মতে, সিলেটে সবচেয়ে বেশি এইডস রোগী রয়েছেন। এইডস রোগীর বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য ফেরত। তার মধ্যে সৌদি আরব, কুয়েত ও দুবাই ফেরত বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আশপাশের দেশ ফেরত কিছু রোগীও রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে তাদের স্ত্রীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এ রোগে। এক্ষেত্রে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের নিয়মিত চেকআপ করা গেলে সিলেটে এইচআইভি এইডসের ঝুঁকি কমে যেত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এইচআইভি এইডস আক্রান্ত একাধিক নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গর্ভবতী হওয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন তারা। তাদের পরামর্শ মতো সন্তানেরও জন্ম হয়। এখন সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। এমনকি যারাই এআরবি ওষুধ খাচ্ছেন তারা সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মোতাহার হোসাইন জানান, ওসমানীর পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে আসা গর্ভবতী মায়েদেরও কাউন্সেলিং করে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। পজেটিভ পাওয়া গেলে পিএমটিসিটির অধীনে প্রসূতি মায়ের চিকিৎসা চলে। নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যে এইচআইভি পজেটিভ ৪৮ জন প্রসূতি মা সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন। এটা অনেক বড় সাফল্য। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে পজেটিভ রোগীদের পাঠানো হয় হাসপাতালে। পজেটেভ রোগীদের সেবার আওতায় এনে নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিসক ও পিএমটিসিটি প্রোগ্রামের ফোকাল পার্সন ডা. আবু নঈম মোহাম্মদ বলেন, সিলেটে দিন দিন এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগী বেড়েই চলেছে। বিদেশ ফেরত প্রবাসীরাই এই রোগ দেশে নিয়ে আসছেন। তাদের মাধ্যমে পরিবারে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের দেশে প্রবেশের পরই চেকআপ করা প্রয়োজন।

এফএ/পিআর