বিশেষ প্রতিবেদন

‘রহস্য বৃত্তে’ আটকা প্রিমিয়ার ব্যাংক ডাকাতি মামলা

রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখায় অস্ত্রের মুখে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় একজন ডাকাতকেই শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন : গোলকধাঁধায় পুলিশ, কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই ব্যাংকটির শাখায় ক্লোজড সার্কিট টিভির ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়নি। সেন্ট্রালি তা মনিটর ও সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও তা নেই। অন্যদিকে আশপাশের ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হলেও ওই ব্যাংকটির সদর দরজা পর্যন্ত ফুটেজ কাভার করেনি। যে কারণে ডাকাত ও টাকা রুট সম্পর্কে অন্ধকারে পুলিশ।

আরও পড়ুন : প্রিমিয়ার ব্যাংকে ডাকাতি বিচ্ছিন্ন ঘটনা : চেয়ারম্যান

Advertisement

আবার ব্যাংকটির শাখার তৎকালীন কর্মকর্তাদের দেয়া বক্তব্য ও তথ্য-প্রমাণের অভাবে রহস্যেই আটকে আছে। কারণ একজন ডাকাত আসলেন, অস্ত্র তাক করে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে চলেও গেলেন। ৭/৮ জন কর্মকর্তা তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন! এমন দৃশ্য সিনেমাতেই শুধু সম্ভব। আবার একই সময় সিসিটিভি সচল না থাকা সন্দেহজনক বলছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন : প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৩ লাখ টাকা লুট

অন্যদিকে ২৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় ওই ব্যাংকের তৎকালীন দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন লুটের শিকার বাড্ডা প্রিমিয়ার ব্যাংক শাখার তৎকালীন ম্যানেজার ও ম্যানেজার (অপারেশন)।

গত ২০ আগস্ট (সোমবার) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ব্যাংক লেনদেনের সময় এক ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারকে পিস্তল ঠেকায়। এরপর ব্যাংকের সব স্টাফকে ভোল্ট রুমে ঢুকিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ নিয়ে যায়। পরের দিন মঙ্গলবার রাতে ব্যাংকটির সদর কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসার (জেনারেল সার্ভিসেস ডিভিশন) রাহাত আলম বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮।

Advertisement

ঘটনার পর বাড্ডা থানা পুলিশ জানায়, ব্যাংক চলাকালীন ডাকাতির উদ্দেশ্যে একজন ডাকাতই ভেতরে প্রবেশ করেছিল।

মামলা দায়েরের পর বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) ইয়াসিন গাজী জানিয়েছিলেন, ‘আমরা গোলক ধাঁধার মধ্যে আছি। তদন্তের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য আমাদের প্রয়োজন সেটা পাচ্ছি না। ব্যাংকটির শাখার প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তারা একেক সময় একেক রকমের তথ্য দিচ্ছেন। কথায় কাজে যথেষ্ট গরমিল পাচ্ছি।’

বর্তমানে প্রিমিয়ার ব্যাংক ডাকাতির ওই মামলা তদন্ত করছে ডিএমপি’র সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মীর মোদাচ্ছের হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অনেক চেষ্টা করেও আমরা প্রিমিয়ার ব্যাংকটির শাখার সিটিটিভি ফুটেজ পাইনি। আবার ব্যাংক শাখাটির কর্মকর্তাদের বক্তব্যও আমাদের মনোপুত হয়নি। আশাপাশের সিটিটিভি ফুটেজও ব্যাংকটি কাভার করে না। সব মিলিয়ে রহস্যই কাটেনি। ডাকাত কী করে ডাকাতি করলো, কয়জন এসেছিল, ডাকাতি আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নিশ্চিত করে কিছুই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম রিয়াজুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকের ক্যাশ থেকে টাকা লুটের ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে শাখার ম্যানেজার ও ম্যানেজার অপারেশনকে বরখাস্ত করেছি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিয়েও সহযোগিতার কথা জানান তিনি।

তবে ডাকাতির দিন কেন সিটিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কে বলেছে সিসি ক্যামেরা সক্রিয় ছিল না? ফুটেজ আছে।’

সিসি ক্যামেরা ছিল? তাহলে ফুটেজে কি পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ সক্রিয় ছিল, ফুটেজেও মিলছে। এ বিষয়টি কনসার্ন ডিপার্টমেন্ট আইটি ডিভিশন ভালো বলতে পারবে।’

জেইউ/এসএইচএস/পিআর