যে চোখে অন্ধকার দেখছিলেন সেই চোখই হয়ে উঠেছে মধু বেগমের আলোর ঠিকানা। বসত-বাড়ির এক টুকরো পরিত্যক্ত জমিতে ক্ষুদ্র খামার গড়ে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন এ বিধবা নারী। সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে এখন এক আদর্শ কৃষি খামারের মালিক হয়ে উঠেছেন তিনি। এ গল্প ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের ভূপতিপুর গ্রামের গ্রামীণ নারী মধু বেগমের।
Advertisement
১৯৮৮ সালে বসতবাড়ির সঙ্গে ১০ কাঠা জমিতে ফলদ ও বনজ বৃক্ষের একটি নার্সারি গড়ে তোলেন ভুপতিপুর গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়া। নার্সারির চারা বিক্রয় করে ১ ছেলে, ৩ মেয়ে ও স্ত্রী মধু বেগমকে নিয়ে ভালোই চলছিল বেলাল মিয়ার সংসার। কিন্তু ২০০৩ সালে হঠাৎ করে মারা যান এ কৃষক। এরপর থেকে চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে মধু বেগমের। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব একা হয়ে পড়েন তিনি। কীভাবে চলবে সংসার ভেবে কূল কিনারা না পেয়ে শেষে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে স্বামীর সেই নার্সারির হাল ধরেন তিনি। সময় যত বদলাতে থাকে সেই সঙ্গে বদলাতে থাকে মধু বেগমের চিন্তা ভাবনাও। নার্সারিতে শুধু গাছের চারা বা হাতে গোনা কিছু ফলদ বৃক্ষের চারা নেয়। অল্প সময়ে ফল ধরে এমন জাতীয় ফলের বিজ সংগ্রহ করেন তিনি। শুরু করেন উন্নত জাতের পেঁপের চারা উৎপাদন ।
বর্তমানে ১১ শতক জমিতে মধু বেগম পেঁপের চারা তৈরি করছেন। আর এখান থেকে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার পেঁপের চারা লক্ষাধিক টাকায় বিক্রয় করেন। সেই অর্থ দিয়ে পাশেই ৪০ শতক জমি কিনে পুকুর কেটে করছেন মাছ চাষ। সেখান থেকে সংসারের মাছের চাহিদা পূরণ হয়ে বাজারে বিক্রিও করছেন নানা প্রজাতির মাছ। ৩টি গাভি নিয়ে ছোট্ট একটি ফার্মও গড়ে তুলেছেন তিনি। বাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জমিতে বিধবা মধু বেগমের লাভজনক এমন খামার ও চাষ প্রক্রিয়া দেখে এগিয়ে এসেছেন বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের এক নারীকর্মী রাজিয়া খাতুন। রাজিয়া খাতুন মধু বেগমকে পরামর্শ দেয় কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য। শুধু পরামর্শ নয় ১ কেজি কেঁচো অফিস থেকে দেয় বিনা টাকায়। মধু বেগম প্রথমে ৩টি চাঁড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। তারপর ব্র্যাক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ঘর বানিয়ে সেখানে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। এখন প্রতিমাসে ৩শ কেজি কেঁচো সার উৎপাদন করে সেখান থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রয় করছেন তিনি। বর্তমানে মধু বেগম তার বসতবাড়ির বৃক্ষের চারা, ফলের চারা, পুকুরের মাছ, কেঁচো সার ও গাভির খামার থেকে বছরে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করছেন। মধু বেগমের এ খামারে ছেলে-মেয়েও সময় দেয়। মাকে তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। মধু বেগম তার সন্তানদের বিয়েও দিয়েছেন ।
মধু বেগম বলেন, হঠাৎ স্বামী মৃত্যুর পর চোখে অন্ধকার দেখতে থাকি। কিন্তু স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট্ট বনজ ও ফলদ নার্সারি থেকে আরও আয় করা যায় কীভাবে তা ভাবতে থাকি। এক পর্যায়ে পেঁপের চারার দিকে মনোযোগ দিয়। আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
Advertisement
তিনি বলেন, যে কোনো একটি বাড়িতে ২/৩টি গাভি পালন করে তার গোবরের সঙ্গে কলা গাছের টুকরা ও ইপিল ইপিল গাছের পাতা দিয়ে অতি সহজেই এই কেঁচো সার উৎপাদন করে একটি পরিবার ভালো ভাবে চলতে পারে। এ খামারের আয় থেকেই বর্তমানে তিনি ৪০ শতক জমি রেখেছেন বলে জানান।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমএএস/পিআর