প্রায় ১২ লাখ ২৪ হাজার ৬৪৭ জন মানুষের বসবাস শরীয়তপুরে। কিন্তু এ জনসংখ্যার বড় একটি অংশ পরিবার পরিবকল্পনার সেবার আওতার বাইরে। জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় খুঁড়িয়ে চলছে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।
Advertisement
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালায় সূত্র জানায়, প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও শরীয়তপুরে ৬৬টি ইউনিয়নের বিপরীতে আছে ৩৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১৮টি কেন্দ্র সেবা দেয়ার জন্য উপযোগী। বাকি ১৫টি কেন্দ্র জরাজীর্ণ অবস্থায় সেবার অনুপযোগী হয়ে আছে। রয়েছে জনবল সংকটও।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের জুনিয়র পরিসংখ্যান সহকারী মো. বোরহান হাওলাদার জানান, শরীয়তপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে মোট পদের সংখ্যা ৫৬৪টি। ১৬৬টি পদ খালি থাকায় কোনো কোনো ইউনিটে একজনকে তিনজনের কাজও করতে হচ্ছে। আর জেলার ৬৬ ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৩৩টি। বেশ কিছু ইউনিয়ন আছে যেখানে মাত্র একজন মাঠকর্মী ইউনিয়নের ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নটি পদ্মা নদী বেষ্টিত। ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে তিনজন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। সদর উপজেলার শৌলপাড়া একটি জনবহুল ইউনিয়ন এখানে চারজন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র দুইজন ও ডোমসার ইউনিয়নে ছয়জন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র দুইজন। জনবল সংকটে চলছে প্রতিটি ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলো। এ চিত্র মোটামুটি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নেরই। জেলার ৬টি উপজেলায় একজন করে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও, পুরো জেলায় আছে দুইজন।
Advertisement
সদর উপজেলা চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) রাসেল বলেন, পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। স্থায়ী পদ্ধতিতে পুরুষেরা এনএসভি, আর মহিলারা টিউবেকটমি, দীর্ঘ মেয়াদি ৩ থেকে ৫ বছর আইইউডি, স্বল্প মেয়াদি কনডম, আপন-মিনিপিল ও মিশ্র খাবার বড়ি এবং ৩ মাস মেয়াদি ইনজেকশন দিয়ে থাকে। তাছাড়া বুকের দুধ খাওয়ানো নির্ভর জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতিতে ল্যাকটেশনাল অ্যামেনোরিয়া মেথড (ল্যাম) দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে।
সোডেপ নামে একটি এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক শামীম খন্দকার বলেন, আমাদের সমিতিগুলোতে গিয়ে মাঠকর্মীরা নারীদের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে বিভিন্ন ধারণা দিয়ে থাকেন। যেমন দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়। আমরা যতটুকু জানি জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে জনবল সংকট, উপকরণ এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। তাই জেলার সাধারণ মানুষ এ বিভাগে কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সকলে মিলে সচেতন হয়ে উঠলে এর সমাধান হতে পারে।
সরেজমিনে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের কোয়ারপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় কয়েজন নারীর সঙ্গে। তাদের একজন রাশেদা বেগম (৩২) জানান, তার এক ছেলে এক মেয়ে। তিনি ডোমসার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সদস্য। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন। তিনি বিয়ের পর থেকেই মিশ্র খাবার বড়ি সুখী ব্যবহার করছেন।
অন্যদিকে একই এলাকার দুই সন্তানের জননী রিনা বেগম (২৫), ডেইজি বেগম (৩৫) এবং আসমা বেগম (২৫) জানালেন, তারা নিম্ন আয়ের হওয়ায় পুষ্টিকর খাবারসহ বাচ্চা জন্মদান পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালায় থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন।
Advertisement
শরীয়তপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. জাকির হোসেন জানান, ভবন এবং জনবল সংকটে পর্যাপ্ত সেবা দেয়া যাচ্ছে না। তবে ভবন ও জনবল সংকট থাকলেও পর্যাপ্ত মেডিসিন রয়েছে ইউনিয়ন কেন্দ্রগুলোতে। সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। আশা করছি শূন্য পদে কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সকল সমস্যার সমাধান হবে।
এমএএস/পিআর