খেলাধুলা

বাংলাদেশ এবার অনেক দূর যাবে, হারাবে অনেক বড় দলকে : আশরাফুল হক

বাংলা চলচ্চিত্রর ইতিহাসের সফলতম কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দোপাধ্যায়ের কালজয়ী সংলাপ, সাগর পাড়ের ইংল্যান্ড। বাংলা সাহিত্যিকদের ভাষায় ‘সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের’ দেশ ইংল্যান্ড। সত্যিই তাই। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে।

Advertisement

তাতে কি? এই ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের ওভালের প্রায় ২৫ হাজার দর্শক আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়াম যে বাঙালির কলতানে মুখরিত। গত ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আগের ম্যাচেও ওভাল ছিল দর্শকে ভরা। বাংলাদেশের সমর্থকে ঠাসা। প্রবাসী বাঙালি আর দেশ থেকে খেলা দেখতে যাওয়া সমর্থক-ভক্তদের গগনবিদারী চিৎকার, হাততালি, বাংলাদেশ-বাংলাদেশ, সাকিব-সাকিব ধ্বনিতে বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছিল ওভালের আকাশ বাতাস।

আজও একই অবস্থা। সেই দুপুর দেড়টায় খেলা শুরুর অন্তত আড়াই ঘন্টা আগে থেকে লন্ডনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাতাল রেল (টিউব), বাস, প্রাইভেট কার ও ট্যাক্সিতে চেপে ওভালে এসে সমবেত হয় অন্তত ১৫ হাজার বাঙালি। তাদের বেশির ভাগেরই পরনে বাংলাদেশের সবুজ জার্সি। অনেকেরই হাতে ছোট বড় জাতীয় পতাকা।

শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিরাই নন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও খেলা দেখতে এসেছেন অনেক প্রবাসী বাঙালি। বাংলাদেশের তরুণ ব্যবসায়ী আল মামুন, তার স্ত্রী শিমুল এবং ছেলেকে নিয়ে এসেছেন সুদূর কানাডা থেকে। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে তারা জানালেন, প্রিয় জাতীয় দলকে সাপোর্ট দিতে আমরা কানাডা থেকে এসেছি। এ ম্যাচ দেখেই ফিরে যাব কানাডায়।

Advertisement

ঢাকার ফকিরাপুল এলাকার মেয়ে শিমুল জানালেন, ‘দেশের বাইরে বিশ্বকাপ ম্যাচ, তাও আমাদের জাতীয় দলের- তাই অন্যরকম ভাললাগা । আজকের ম্যাচের টিকিট অনলাইনে কিনে এসেছি লাল সবুজের দলের ম্যাচ দেখতে।’ তাদের ১০ বছরের ছেলে জাইয়ান আল মামুন সাকিবের বড় ভক্ত। সাকিবের খেলা মাঠে বসে দেখতে পেরে সে পুলকিত ও উদ্বেলিত।

জাইয়ানের মত শতশত শিশু কিশোর এখন ওভালে প্রিয় জাতীয় দলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিতে। এদিকে আগেই জানা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, অন্যতম শীর্ষ পরিচালক মাহবুবুল আনাম, এনায়েত হোসেন সিরাজ, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, কাজী এনাম আর সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজনসহ দেশের ক্রিকেটের পরিচালনা পর্ষদের আরও অনেকেই এখন লন্ডনে।

তারা সবাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের মতো আজ (বুধবার) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে মাঠে। এদিকে বর্তমান বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের পাশাপাশি দেশের ক্রিকেট জাগরণ, উত্তোরন আর উন্নয়নের অন্যতম কারিগর, বিশিষ্ট ক্রিকেট সংগঠক সৈয়দ আশরাফুল হকও এসেছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে।

আজ খেলা শুরুর আগে ওভালের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের ঠিক প্রবেশ মুখে দেখা এ দেশ বরেণ্য ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ যখন ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে, সৈয়দ আশরাফুল হক তখন বিসিবির সাধারণ সম্পাদক।

Advertisement

ঘরোয়া ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আজাদ বয়েজের হয়ে ৭০ দশকের পুরো সময় এবং ৮০’র দশকের প্রথমভাগে দাপটে খেলা অলরাউন্ডার (মিডল অর্ডার কাম অফস্পিনার) সৈয়দ আশরাফুল হক ঢাকা লিগের ‘প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও’। বাংলাদেশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যে আইসিসি ট্রফি খেলে ১৯৯৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেয়েছে, দেশের হয়ে ১৯৭৯ সালে এই ইংল্যান্ডে প্রথম আইসিসি ট্রফিও খেলেছেন সৈয়দ আশরাফুল। সেই আসরে ফিজির বিপক্ষে ২৩ রানে ৭ উইকেট শিকারের এক দূর্লভ কৃতিত্বও দেখিয়েছিলেন এ অফস্পিনার।

জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সৈয়দ আশরাফুল হক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরও প্রধান নির্বাহী ছিলেন। আজ প্রিয় জাতীয় দলের খেলা দেখতে এসে আবেগ প্রবন সৈয়দ আশরাফুল। তার বিশ্বাস এ দলটি এবারের বিশ্বকাপে বেশ ভাল খেলবে।

মাশরাফির দল এবারের আসরের দারুণ শুরু করায় উদ্বেলিত সৈয়দ আশরাফুল হক। তার বিশ্বাস, ‘এবার মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক আর রিয়াদরা অনেক দূর যাবে। আমার বিশ্বাস সেই পথে তারা বড় দলের তকমাধারি অনেক দলকেই হারাবে।’

এআরবি/এসএএস